এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা- বিখ্যাত গীতিকার গোবিন্দ হালদারের রচিত অমর গানটি মহান বিজয় উল্লাসের এই অনুভূতিকে আরো শিহরিত করে হৃদয়ের অবিরাম স্পন্দনে । ইতিহাসের পাতায় বাঙালি জাতির শৌর্য-বীর্যের এক মহিমান্বিত বিজয়গাঁথা এই বিজয় দিবস। মহান এই গৌরবগাঁথা নিয়ে তারুণ্যের অনুভূতি তুলে ধরেছেন বাঁধন বৈষ্ণব…
স্বাধীনতার স্পর্শ পেয়েছি তবে স্বাধীনতা নয়
শিশু-কিশোরের ফুলের মতো জীবনের প্রতিদান, দীর্ঘ নয়মাস যুদ্ধের ফল আমাদের স্বাধীনতা। শোষিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত বাঙালি অত্যাচারের খাঁচা থেকে মুক্ত আজ। তবে স্বাধীনতাকে রক্ষা করাও একটি চ্যালেঞ্জিং ইস্যু। হেনরী ওয়ার্ড বিশার বলেছেন, “স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করা কঠিন।” আমরা লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও রক্ষা করতে পারছি কই? ১৯৭১ পরবর্তী সময় থেকে ২০২৪ পর্যন্ত দৃষ্টিপাত করলে আমাদের পরাধীনতার খণ্ড চিত্র ভেসে ওঠে। জাতি হিসেবে আমরা স্বাধীন তবে বাকস্বাধীনতায় নয়, অবকাঠামো উন্নত হচ্ছে মানুষ উন্নত হচ্ছে না, রাজনৈতিকভাবে কুক্ষিগত করে রেখেছে আমাদের। শোষকের হার এত বেড়ে গেছে যা ৭১’র শোষককেও যেন হার মানাবে। আমরা স্বাধীনতার স্পর্শ পেয়েছি, স্বাধীনতা পাই নি। আমরা স্বাধীন দেশে স্বাধীন মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে নিজেদের আত্মপ্রকাশ করতে চাই। স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়েও আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি না আমরা স্বাধীন। আমাদের এই শোষিতের শেকল থেকে বের হতে হবে। আমরা যেন বলতে পারি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক।
ছাবিহা জামান ইসপা, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ, চট্টগ্রাম কলেজ।
অসাম্প্রদায়িক চেতনার অর্জন স্বাধীনতা
নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতির ঐক্যের অর্জন এই বিজয়। শত বছরের শোষণ নিপীড়নের শেষে সর্বশেষ পাক বাহিনীর থেকে ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দ্বারা বাঙালির অর্জন স্বাধীনতা। এই অর্জন মোটেই সহজ ছিল না। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই নতুন রাষ্ট্রের অবস্থা ছিল নাজেহাল। যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে জীবন পরিচালনা করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল দিকেই ছিল ক্ষয়ক্ষতিতে ভরপুর। সেই থেকে ধীরে ধীরে আমরা এসে পৌঁছাই আজকের উন্নয়নশীল দেশে। পৃথিবীর বুকে ছোট্ট একটি রাষ্ট্র হিসেবে আমরা এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি যা বাঙালি জাতির গৌরবগাঁথা। বিজয়ের এই অর্জনের অম্লানতায় অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো দুর্নীতি ও দরিদ্রতা এই সমস্যাটি যেমন অতীতেও ছিল এখনো আছে, তাই সম্পত্তির সঠিক বণ্টনের মাধ্যমে সমাধানের লক্ষ্যে ও সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রয়োজন। সেই প্রত্যাশা রেখে আমরা যেন পৃথিবীর বুকে সুখী সমৃদ্ধি একটি রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারি তারই আশাবাদী। সবশেষে মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা আর অসাম্প্রদায়িক চেতনা জাগ্রত রেখে এবং যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকেই এই দিবস তাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
শামায়েল উদ্দিন মাইন, শিক্ষার্থী সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।
বিজয় হলো জাতির সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগ
বাংলাদেশের ইতিহাস যুগে যুগে রক্তক্ষয়ী ইতিহাসের বৈশিষ্ট্য বহন করে আসছে। বিদেশিদের শাসন শোষণের ইতিহাস বাঙালিদের বহন করতে হয়েছিল প্রাচীন কাল থেকে। এই অত্যাচারের পাতায় ইতি টেনেছিল ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বরে অর্জন করা বিজয়। আমরা যারা ’৭১ দেখিনি হয়ত কল্পনাও করতে পারব না এই বিজয়ের যথার্থ মাহাত্ম্য। ৩০ লক্ষ প্রাণ, সেই সাথে ২ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীন দেশ। আমরা সেই বীর সন্তানের জীবনগাঁথা আজীবন হৃদয়ে লালন করব। তবে একটা কথা না বললেই নয়, এক তথ্যসূত্রে জানা গিয়েছে ১৯৭২ সালে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছিল ৭০ হাজার কিন্তু বর্তমানে সরকারি সুবিধাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। একটি স্বাধীন দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যথাযথ প্রমাণস্বরূপ ঐসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুখোশ উন্মোচন করা, এবং প্রকৃত দেশপ্রেমী জাতির সূর্য সন্তানদের যথাযথ সম্মান প্রদান। তবেই বিজয়ের মর্যাদা আগামী প্রজন্মের চেতনায় মহীয়ান হয়ে থাকবে।
বন্যা রানী বৈষ্ণব, শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ।
দেশপ্রেম ও অনুপ্রেরণার গৌরবগাঁথা এই বিজয়
‘স্বাধীনতা’ কেবল একটি শব্দ নয় এটি আমাদের হৃদয়ে লালিত এক স্নিগ্ধ আবেগঘন অনুভূতি। বাঙালি জাতির শৌর্য আর দেশপ্রেমের চেতনায় একতাবদ্ধ হয়ে বহিঃশত্রু দমনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্তের প্রকাশ হলো ’৭১ এর বিজয়। এদিনেই ধরিত্রীর এই ভূখণ্ডবাসী দেখেছিল বিজয়ের লাল সূর্য, পেয়েছিল মুক্তির অফুরন্ত স্বাদ, হেসেছিল তৃপ্তির হাসি। বাঙালি জাতির মহিমান্বিত এই অর্জনকে চিরস্মরণীয় রাখার সংকল্পে দিবসটি উপলক্ষ্যে দেশব্যাপী বর্ণিল আয়োজন থাকে। তারুণ্য ও আগামী প্রজন্মের হৃদয়ে এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার প্রত্যয়ে এসব আয়োজনে জানা যায় গৌরবের ইতিহাস। বিজয়ের চেতনাকে অন্তরে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতি গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে আমাদেরই।
ইসরাত জাহান ইবা, শিক্ষার্থী, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, সরকারি তিতুমীর কলেজ।