ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার শাসনামলে হয়রানি ও নিষ্পেষণের শিকার ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন। তার চারপাশে জল্পনা-কল্পনা ও গল্পের যেন শেষ নেই। বিশেষ করে আলোচনা-সমালোচনা চলছে– এ সরকার কত দিন থাকবে বা কবে বিদায় নেবে।
এ বিষয়ে নিজেই কথা বলেছেন ড. ইউনূস। তিনি জানিয়েছেন, কবে যাচ্ছে তার সরকার।
রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, একটা বিষয়ে সবাই জানতে আগ্রহী, কখন আমাদের সরকার বিদায় নেবে। এর জবাব আপনাদের হাতে, কখন আপনারা আমাদের বিদায় দেবেন। আমরা কেউ দেশ শাসনের মানুষ নই। আমাদের নিজ নিজ পেশায় আমরা আনন্দ পাই।
তিনি বলেন, দেশের সংকটকালে ছাত্রদের আহ্বানে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেছি।
আমি সমস্ত শক্তি দিয়ে এই দায়িত্ব পালন করব। আমাদের উপদেষ্টামণ্ডলীও এই লক্ষ্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি টিম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। নির্বাচন কবে হবে, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত; আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে, আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের সাধারণ জনগণ আমাদের নিয়োগ সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগতভাবে সবাইকে বিষয়টি মনে করিয়ে দেব যাতে হঠাৎ করে এ প্রশ্ন উত্থাপিত না হয়, আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে, আমরা চলে যাব। আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।
সংস্কার নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমরা বিভিন্ন সংস্কারের কাজ শুরু করেছি। দেশবাসীকে অনুরোধ করব, আলোচনা শুরু করতে আমরা সর্বনিম্ন কী কী কাজ করতে পারি।এই আলোচনা আমাদের জন্য একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। রাজনৈতিক আলোচনা থেকেই সেই সিদ্ধান্ত আসবে। যদি আমরা এই দিকনির্দেশনা না পাই, তাহলে দাতা সরকার এবং আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আমাদের পক্ষে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করছি যে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে কোনো প্রশ্ন তুলব না। আমরা আপনাদের সবার দোয়া চাই।
যে ক’দিন আমি আছি, সে সময়টুকু উপদেষ্টামণ্ডলীর প্রত্যেকে নিজেদের সাধ্যমতো দেশের এই সংকটকালে সংকট উত্তরণে নিজেদের মেধা কাজে লাগানোর চেষ্টা করবেন। নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি, আমাদের মতানৈক্যের কারণে যেন সেটা হাতছাড়া না হয়, এটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই। যদি এবার এই সুযোগ হারিয়ে ফেলি, তাহলে আমরা জাতি হিসেবে পরাজিত হব।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, শহীদ, আহত এবং জীবিত ছাত্র-জনতার কাছে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকতে চাই, আমরা যেন এই অর্জনকে কিছুতেই হারিয়ে যেতে না দেই। যে সুযোগ তারা তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমাদের দিয়েছে তার মাধ্যমে আমাদের দেশকে পৃথিবীর একটি শ্রদ্ধেয় এবং সব দিকে দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী দেশে পরিণত করতে পারি আমরা তার শপথ নিয়েছি। সব শেষে আবারও আমারা আমাদের দেশের সব মানুষ, শিশু, কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, বয়স্ক, বৃদ্ধ, নারী, পুরুষ সবার কাছে দোয়া চাইছি যেন আমরা আমাদের সবার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে সফল হই।