অপরিকল্পিত প্রকল্পে চট্টগ্রামে বাড়ছে জলাবদ্ধতা

📄🖋: মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ মাস আগে

প্রায় সময় বৃষ্টিতে প্লাবিত হয় বন্দর নগরী চট্টগ্রাম,সম্প্রতি টানা বৃষ্টিপাতেও তার ব্যাতিক্রম দেখা যায়নি। ফলে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে নগরবাসী। বিশেষজ্ঞদের মতে অপরিকল্পিত নগরায়ন ও বিভিন্ন সেবা সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে প্রায়-ই এই অবস্থার সৃষ্টি হয় ।

সম্প্রতি দেখা যায় টানা বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, ষোলশহর, কাপাসগোলা, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ অধিকাংশ নিচু এলাকা।

চিত্র পাল্টাতে জলাবদ্ধতা নিরসনের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচেও সুফল পায়নি নগরবাসী। তবুও বর্ষায় জলাবদ্ধতার কষ্ট থেকে চট্টগ্রামবাসীর মুক্তি মেলেনি এখনো । বরং দায় অন্যের উপর চাপিয়ে বাঁচার চেষ্টা করে সংশ্লিষ্ঠ দপ্তরগুলো।

সি ডি এ’র তথ্য মতে, চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প নামে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) অনুমোদন পেয়েছিল। পরে ৫৪% ব্যয় বাড়িয়ে শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে ।

জানা যায় বিগত ২০১৭ সালের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। পরে ২০১৮ সালে এই প্রকল্পে সেনাবাহিনীকে যুক্ত করা হয়।

প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা দুই দফায় পুনর্মূল্যায়ন করে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ও বেড়েছে ৫৪ শতাংশ।

কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড কর্মকর্তারা ১২ মার্চ ২০২৪ তারিখে এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন , চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন খালের ওপর নতুন নির্মাণ করা ছয়টি রেগুলেটরের মধ্যে পাঁচটি বর্ষার আগেই খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই নগরীর ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ খাল পুনর্খননের কাজ শেষ হলে আসন্ন বর্ষায় নগরীর জলাবদ্ধতার মাত্রা অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।

সংবাদ সম্মেলনে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. ফেরদৌস আহমেদ বলেছিলেন, চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পটি সরকারের একটি অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। ২০টি খালের পাড়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল (রিটেইনিং ওয়াল) নির্মাণ করা হয়েছে। অধিকাংশ ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ ও সিটি করপোরেশন সমন্বয় করে কাজ করছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন সেবা সংস্থার পাইপলাইনকে জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করছে সিডিএ। চট্টগ্রাম ওয়াসা, কর্ণফুলী গ্যাস ও টিঅ্যান্ডটির পাইপলাইন ও আন্ডারগ্রাউন্ডে এসব ক্যাবল লাইন পানি নিষ্কাশনে বাধা বলছে তারা।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ একাধিক বার বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছিলেন, নর্দমার পানি বিভিন্ন বাধার কারণে সঠিকভাবে পানি নিষ্কাশন হচ্ছে না ।

এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছে এ নিয়ে তারা কাজ করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জলাবদ্ধতা নিরসনে নেয়া প্রকল্পটি বিশেষজ্ঞের মতামত না নিয়ে এবং সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের কাজ শুরুর পর নকশায় ঘষামাজা করতে হয়েছে। ফলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। সক্ষমতা না থাকার পরও সিডিএকে দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন করানোর ফলে পদে পদে জটিলতা দেখা দিয়েছে ।

জানা গেছে, বিগত ২০১৪ সালে নগরীর বহদ্দারহাট থেকে বলিরহাট পর্যন্ত নতুন খাল খননকাজ শুরু করে সিটি করপোরেশন। এরপর গত ১০ বছরে নতুন কোনো খাল খনন না হওয়ায় নগরীর ড্রেনেজব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়েছিল। ফলে জলাবদ্ধতার তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে। আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভারী বৃষ্টিতে গত এক বছরে অন্তত ১০ বার চট্টগ্রাম নগরী পানিতে ডুবেছে। অনেক খাল, ছড়া ও নালা নর্দমা দখল করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনে যত সংস্থা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ করছে, সেগুলো পৃথক পৃথক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। যেমন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ও ওয়াসা এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে। তাদের মনিটরিং কর্তৃপক্ষ আলাদা হওয়ার কারণে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ‘যে যার যার মতো’ কাজ করছেন। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে একটি শক্তিশালী স্টিয়ারিং কমিটি হলে এসব প্রকল্পের সমন্বয় করা সহজ হবে। এরই সঙ্গে সংস্থাগুলোর ‘বিরোধ’ এড়িয়ে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং দ্রুতগতিতে কাজ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ (ভারপ্রাপ্ত) ও নগর পরিকল্পনাবিদ -২ মো.আবু ঈসা আনসারীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান (১৯৯৫-২০১৫) প্রকল্পে কিছু সমস্যা ছিল । আগামীতে পরিকল্পিতভাবে মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ড্রেনেজ ব্যবস্থায় জোর দিলে এই জলবদ্ধতা কমতে পারে।