বিলাস কৃষ্ণ দাস প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর। নিয়োগকাল থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত রয়েছেন নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার মধ্য চরআমানুল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। গত ১১ বছর ধরে তিনি মাসের পর মাস, সপ্তাহের পর সপ্তাহ অনুপস্থিত থেকে হঠাৎ এসে পেছনের তারিখ থেকে হাজিরা খাতায় এবং বেতন বিলের শিটে স্বাক্ষর করে কার্য সম্পন্ন করতেন। তার এ অনিয়মে সহযোগিতা করে আসছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা। ফলে খন্ডকালীন প্রভাষক পদেও শ্রেণী কার্যক্রম চালিয়ে নিতেন একই জেলাধীন সুবর্ণচর উপজেলার সৈকত কলেজে।
এই মর্মে ২০২৩ সালের ২ মে, হাতিয়াকন্ঠের অনলাইনে প্রকাশিত “হাতিয়ায় প্রাথমিক শিক্ষায় ব্যাপক নিয়ম, ভেস্তে যাচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা” শিরোনামে বিস্তারিত উঠে আসে। যেখানে বলা হয় হাতিয়া প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার অফিস স্মারক নং- সউশিঅ/হাতিয়া/নোয়া/২০২২/৫৫(০৫)তারিখ ৮ মার্চ,২০২২ খ্রি. ক্লাস্টার অফিসার মধ্য চরআমানুল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিলাস কৃষ্ণ দাস’কে ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ থেকে টানা চার মাস হাজিরা খাতায় অনুপস্থিত পেয়েও কেবলমাত্র ২ মার্চ, ২০২২ থেকে ৮ মার্চ ২০২২ খ্রি. পর্যন্ত ৭ দিনের অনুপস্থিতির কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। এছাড়াও প্রতিবেদনটিতে উক্ত স্কুলটিসহ অন্যান্য স্কুলের নানান অসঙ্গতির ক্ষেত্রেও টিইও, এটিইও’দের নানান দুর্নীতি এবং দায়িত্বে অবহেলার চিত্রও উঠে আসে।
মধ্য চরআমানুল্যাহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিলাস কৃষ্ণ দাস অতীতের মত সাম্প্রতিক সময়েও অনিয়ম-দুর্নীতি চালিয়ে যাওয়ায় তার সহকারী শিক্ষক এবং এলাকাবাসী নানাভাবে অভিযোগ তোলে। এরই প্রেক্ষিতে গত সোমবার সকাল দশটায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নির্ধারিত সময় অতিবাহিত করে স্কুলে আসেন। খাতা-পত্রে ১০৯ জন ছাত্র-ছাত্রীর নাম থাকলেও স্কুলে পাওয়া যায়নি একজন শিক্ষার্থীও। অবস্থা দেখে আশপাশ এবং স্কুল সংলগ্ন বাজারটিতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার পূর্ববর্তী দশ দিনেও কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে আসেননি। অথচ স্কুলটির এই শূন্য শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। স্লিপ বরাদ্দ থেকে শুরু করে সরকারি সকল বরাদ্দ লুটে নেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। স্কুলটির সহকারী শিক্ষকদের (শিউলি দে, নিবেদিতা রাণী দাস এবং ফয়সাল) কেউই জানেননা স্কুলে যে বরাদ্দ আসে।
স্থানীয় শাহাবুদ্দিন শিহাব জানান, বিলাস বাবু তো এখানে তেমন আসেন না, উনি সৈকত কলেজে শিক্ষকতা করতেন।
মহিউদ্দিন নামের স্থানীয় এক দোকানদার জানান, স্কুলে এখন ছাত্রছাত্রী তেমন আসেন না এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিলাস বাবুও ঠিক মতো আসেন না।
এদিকে, দীর্ঘদিন ধরে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ না হওয়ায় অনেক বছর ধরে বিলাস কৃষ্ণ দাস ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্বে থেকে যত অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছে। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট থেকে ২১ আগস্ট পর্যন্ত তিনি স্কুলে উপস্থিত না থেকে ২২ আগস্ট এসে পূর্বের দিনগুলোতে স্বাক্ষর দিয়ে দেন।
এর আগে ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে ৭ জুলাই (রবিবার) ২০২৪ খ্রিস্টাব্দের অগ্রিম স্বাক্ষর করে যান। ৭ জুলাই, ২০২৪ খ্রি. দুপুরে জনৈক সাংবাদিক উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারকে মোবাইল ফোনে জানালে তিনি বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। এবং একইদিন বিকেলে তিনি উক্ত স্কুলের সহকারী শিক্ষক ফয়সালের মাধ্যমে শিক্ষক হাজিরা খাতা তলব করে তার অফিসে নিয়ে আসেন।
অথচ বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল জব্বারের কার্যালয়ে গিয়ে উক্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও স্কুলটিতে নানান অনিয়ম-দুর্নীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি প্রথম এই প্রতিবেদক থেকে জানতে পেরেছেন বলে উল্লেখ করেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বিলাস কৃষ্ণ দাস এসব অভিযোগ অস্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছেন।
সুবর্ণচর উপজেলাধীন সৈকত কলেজে তার প্রভাষক পদে শ্রেণীপাঠদান প্রসঙ্গে কলেজটির প্রিন্সিপাল মোনায়েম খানের সাথে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের কলেজের অনার্স কোর্স অনুমোদনের শর্ত পূরণের জন্য বিলাস কৃষ্ণ এখানে খন্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেছেন।