নোয়াখালীর হাতিয়া দ্বীপের জনগণকে দিনের পর দিন, যুগের পর যুগ শোষণ, অত্যাচার, হত্যা খুন খারাবি করার পরেও হাতিয়ার জনগণ সুযোগ পেয়েও মোহাম্মদ আলীর শরীরে একটা আঁচড় ও লাগতে দেয়নি। অত্যাচারির দাবালনে জালিয়েছে হাতিয়ার প্রতিটি মানুষকে।
বলছি বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতিতে দেশের সেরা টপে থাকা নোয়াখালী জেলার ৬ আসনের এমপি মোহাম্মদ আলীর কথা, হাতিয়াবাসীকে অত্যাচারে জর্জরিত করেছেন বিভিন্ন উপায়ে। একটি পৌরসভা (হাতিয়া) ও ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নোয়াখালী-৬ আসন। হাতিয়া দ্বীপের তমরুদ্দিন ঘাট থেকে জাহাজমারা চর, আর নিঝুম দ্বীপের মৌলভীচর, কমলাদীঘি থেকে সূর্যমুখী, এবং দেশ বিদেশে সহ মোহাম্মদ আলীর রয়েছে অঢেল সম্পদ, প্রভাব আর প্রতিপত্তি। অনেক গুলো হত্যা মামলার আসামি এই মোহাম্মদ আলী
মোহাম্মদ আলী মনে করতেন হাতিয়া উপজেলা তার কেনা দেশের একটি অঙ্গরাজ্য, যেমন ইচ্ছে ছিলো তেমন করে শোষণ করেছেন তিনি, ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ৫ বছরের কিশোর থেকে বৃদ্ধদের ও। এতো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও হাতিয়াবাসীর জন্য কিছুই করেন নি, হাতিয়া দ্বীপে উন্নয়নের ছিটেফোঁটা ও লাগে নি। উন্নয়ন করেছেন শুধু মাত্র নিজের জন্য,তার পরিবারের জন্য, করেছেন মালেশিয়ায়,কানাড়ায়, সিঙ্গাপুর, বিলাসবহুল বাড়ি গাড়ি, তবুও আরো চাই তার পুরো হাতিয়ায় তার বাহিনী দিয়ে কি করেন নাই! চুরি ডাকাতি, হত্যা গুম সবি করেছেন, গড়ে তুলেছেন হোটেল, শপিং মল, বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, সোজা কথা হলো পুরো হাতিয়াকে জিম্মি করে রেখেছেন, ছিলো না করো কথা বলার স্বাধীনতা মত প্রকাশের স্বাধীনতা।
সরেজমিনে জানা যায় মাসিক বেতনে কিনে রেখেছিলেন সকল সাংবাদিক, গণমাধ্যম কর্মী কে, সাংবাদিকদের কোন উপায় ছিলো না, সত্য কিছু লিখতে গেলেই তার বিপরীতে চলে যেতো, এমন কি সাংবাদিক পরিবারের উপর চলতো তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে স্টিম রোলার, পরিবার পরিজনের চিন্তা করেও তারা মোহাম্মদ আলীর কথায় উঠতো আর বসতো। এমনকি নদী পথে মোহাম্মদ আলীর নৈরাজ্য নিয়ে প্রথম আলোতে নিউজ করায় সাংবাদিক মামুন রাফীর পরিবারকে মোহাম্মদ আলীর নির্দেশে তার গঠিত কুখ্যাত সন্ত্রাস দিয়ে নির্যাতন করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সংবাদকর্মীর সাথে কথা বললে তারা বলেন এই পুরো হাতিয়া উপজেলার একক নিয়ন্ত্রণ ছিলো মোহাম্মদ আলীর, হাতিয়াতে চলতো তার একনায়ক তন্ত্র শাসন, পুরো বাংলাদেশ চলতো এক নিয়মে আর হাতিয়া উপজেলা চলতো আরেক নিয়মে, তার বিরুদ্ধে কিছু বললে বা কিছু সত্য লিখলে চলো আমাদের পরিবারের উপর হামলা সহ হেনস্তা করতো, এমনি জানে মেরে ফেলার হুমকিও দিতো, তাই আমরা
নিরুপায় হয়ে মোহাম্মদ আলীর কথা শুনতে হতো।
কি ছিলো না মোহাম্মদ আলীর শত শত কোটি টাকা পাচার সহ রাজধানীর ধানমন্ডিতে চার কাঠা জমিতে পাঁচ তলা বাড়ি, হাতিয়ায় ইশিতা নামে পাঁচ তলা আবাসিক হোটেল, হাতিয়ায় ৪০ বিঘা জমি, গাজীপুরে চার বিঘা জমি, পূর্বাচলে তিন বিঘা জমি, ইসলামী ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকে কোটি কোটি টাকার এফডিআর, শেয়ার বাজারে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ, চৌমুহনী বাজারের দুই পাশে খাল দখল করে দু’টি মার্কেট, আসকা বাজারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমিতে আরও একটি মার্কেট, হাতিয়া পৌরসভায় বিশাল শপিং কমপ্লেক্স সহ কি নেই তার।
তথ্য বলছে, হাতিয়া পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের টেন্ডার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ সহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতেন মোহাম্মদ আলী এবং তার পরিবার।
হাতিয়া উপজেলাতে প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতেন মোহাম্মদ আলী, বিভিন্ন মামলার আসামি হলেও তাকে টু শব্দও করতো না প্রশাসন, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান, মেম্বার হতে হলে দিতে হতো মোটা অংকের টাকা, উপজেলা চেয়ারম্যানে ২ কোটি, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানে ৫০ লক্ষ থেকে ৮০ লক্ষ, মেম্বার থেকে ৫ থেকে ১০ লক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন দুই দুই বারের সাবেক চেয়ারম্যান বলেন আমি ৩০ লক্ষ দিতে রাজি হয়েছিলাম, তবে অন্য জন ৫০ লক্ষ দেওয়াতে আমাকে চেয়ারম্যান প্রার্থী না দিয়ে তাকে দিয়ে দেয়।
এতো কিছু থাকার পরেও ভূমিহীনদের সম্পদ দখল করেন জানা যায়, ২০০৩ সালে নদী ভাঙনে সব হারিয়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষ হাতিয়া বাজারের ভূমি অফিস সংলগ্ন খাস জমিতে আশ্রয় নেন এবং বসবাস শুরু করেন। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করা হয়। এরপর ভূমি অফিসের মাধ্যমে ওই জমি লিজ নেন মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা। ভূমি অফিসের নথি অনুযায়ী, মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে হাতিয়া বাজারের খাস জমিকে কৃষি খাস জমি হিসেবে উল্লেখ করে ৯৯ বছরের বন্দোবস্তের (লিজ) জন্য আবেদন করা হয়। তবে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে এক বছরের জন্য। এ জমি বন্দোবস্ত নেওয়া ব্যক্তিরা হলেন— মোহাম্মদ আলী , তার স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস, ছেলে মাহতাব আলী, আশিক আলী, মেয়ে সুমাইয়া আলী, শ্যালক ছাইফুর রহমান চৌধুরী, ফরিদুজ্জামান ও ছেলের বউ নাঈমা সুলতানা। বন্দোবস্ত নেওয়ার সময় মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী আয়েশা ফেরদাউস তার স্বামীর পরিচয় উল্লেখ না করে বাবার নাম ব্যবহার করেন। ছেলের বউ নাঈমা সুলতানাও তার স্বামীর নাম উল্লেখ না করে বাবার নাম ব্যবহার করেন। এক বছরের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে খাস জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
মোহাম্মদ আলী বিষয়ে জানতে চাইলে, হাতিয়ার পৌরসভার হানিফ, সাইফুল, করিম,সহ আরো অনেকে জানান হাতিয়াতে খুন খারাবি, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, লুটপাট, নারী ধর্ষণ, সব কিছুই সে করতো,
তার আধিপত্য ও এক নায়কতন্ত্র শাসনে পুরো হাতিয়া উপজেলা জিম্মি করে শোষণ করতো এই মোহাম্মদ আলী, তার বিরুদ্ধে মরার ভয়ে কেউ করি করতেও পারতো না এবং বলতেও পারতো না, এমনও বলেছেন তারা আমরা হিটলার কে দেখিনি শুনেছি তবে মোহাম্মদ আলী হিটলার কে দেখেছি তার চাইতেও কিন্তু কম নয়।
সম্প্রতি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারত পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত অনেক এমপি-মন্ত্রী আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু মোহাম্মদ আলী প্রথম থেকে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেছিলেন। তার পর ১১ আগস্ট রাত ৩ টার দিকে হাতিয়ার ওছখালির নিজ বাসভবন থেকে নিয়ে যান নৌবাহিনী। এ সময় মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আয়েশা ফেরদাউস এবং ছেলে হাতিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান আশিক আলী অমি নৌবাহিনীর সঙ্গে যান। এবং পরে তাঁদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।