পূজা কমিটির বিতর্কিত নেতাসহ ৬ ইসলামি গায়কের নামে মামলা!

📄🖋: মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ মাস আগে
পূজা কমিটির বিতর্কিত নেতাসহ ৬ ইসলামি গায়কের নামে মামলা!

চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র জেএম সেন হল পূজা মণ্ডপে ১০ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে ইসলামি গান গাওয়ার ঘটনায় পূজা উদযাপন কমিটির বিতর্কিত নেতা ও গান গাওয়া চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ১১ অক্টোবর শুক্রবার সন্ধ্যায় নগরীর কোতোয়ালী থানায় সাত জনকে আসামি করে এই মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগরী পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন।

মামলার আসামিরা হলো- পূজা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত, গান পরিবশেন করা চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, মো. নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মো. মামুন। এর মধ্যে ঘটনার দিন রাতে আটক হওয়া শহীদুল করিম ও মো. নুরুল ইসলামকে গান পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি চারজন এখনো পলাতক রয়েছে।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী জানান, ‘চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদাযপন পরিষদের পক্ষ থেকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টার অভিযোগে এজাহার দায়েরের প্রেক্ষিতে এ মামলা হয়েছে।’ মামলার বাদী চট্টগ্রাম মহানগর৷ পূজা উদযাপন পরিষদের অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজনও মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এদিকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেনকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযপান কমিটি কেন্দ্রীয় পরিষদ। আজ ১১ অক্টোবর শুক্রবার বিকেলে পরিষদের দপ্তর সম্পাদক শচীন্দ্র নাথ বাড়ৈর সই করা এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়।

এর আগে, জেএম সেন হলের পূজামণ্ডপে ইসলামী সংগীত পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ও আজ শুক্রবার সকালে মহানগর এলাকা থেকে তাঁদের আটক করা হয় বলে দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সম্মেলন কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান নগর পুলিশের উপ–কমিশনার ও সিএমপি মুখপাত্র রইস উদ্দিন।

আটক দুজন হলেন–মাদ্রাসা শিক্ষক শহিদুল করিম (৪২) ও আরেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নুরুল ইসলাম (৩৪)। গান গাওয়া বাকিদেরও আটকের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

উপ–পুলিশ কমিশনার জানান, ওই দুজনকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এটা পরিকল্পিত কোনো ঘটনা কি না, সেটা জানারও চেষ্টা চলছে। এই ঘটনার সঙ্গে যারই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাঁকেই আইনের আওতায় আনা হবে।

এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উদযাপন অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির ঘটনায় ওই দুজনকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের গাওয়া একটি গানের ভাষার শব্দ চয়ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার উপস্থাপক ও পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্যদের মঞ্চে ডাকেন। মঞ্চে ওঠেন ৬-৭ জন তরুণ। তাঁরা সেখানে দুটি গান পরিবেশন করেন।

প্রথম পরিবেশন করেন, ‘গেরামের নওজোয়ান, হিন্দু মুসলান’ গানটি। এর পর তাঁরা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম/ বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’ ইসলামি গানটি পরিবেশন করলে উপস্থিত সকলে হকচকিয়ে যান।

এই গানের একটা লাইন ছিল-‘বিশ্ব মানুষের মুক্তির শেষ পথ বিপ্লব, ইসলামী বিপ্লব’। গানটির গীতিকার চৌধুরী আবদুল হালিম। পরে উপস্থিত নেতারা ও কয়েকজন বিএনপি নেতার হস্তক্ষেপে তাঁরা মঞ্চ ত্যাগ করেন।
সামাজিক মাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে এবং এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হলে রাতেই চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন ও পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তারা পূজা মণ্ডপে ছুটে যান। তাঁরা পূজা উদযাপন কমিটির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এদিকে দ্রুত এ বিষয়ে প্রশাসন মামলা গ্রহণ করায় এবং দুজন অপরাধীকে আটক করায় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সমন্বয়ক স ম জিয়াউর রহমান। তিনি অবিলম্বে বাকি আসামিদের আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। এছাড়াও তিনি দায়িত্ব পালনে অবহেলার দায়ে চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদকে বাতিল করে দ্রুত নতুন কমিটি দেওয়ার দাবি জানান।

  • চট্টগ্রাম
  • পূজা