হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ

📄🖋: মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে
হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগ

একটি রাষ্ট্রের কাছে ওই রাষ্ট্রের জনগণের যত চাহিদা থাকে, স্বাস্থ্যসেবা হচ্ছে তার অন্যতম। স্বাস্থ্য মানবসম্পদ উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫(ক) ও ১৮(১)-এ চিকিৎসা সেবা ও জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন এবং জনস্বাস্থ্যের উন্নতিসাধনকে রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসা নামক এই মৌলিক চাহিদাটি পূরণ করতে গিয়ে দেশের জনগণকে কম হয়রানির শিকার হতে হয় না, বিশেষ করে জনগণ যদি যায় কোনো সরকারি হাসপাতালে।

এ দেশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি নতুন কোনো বিষয় নয়। বরং পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে এসংক্রান্ত খবরাখবর। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক তদন্তে অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট একটি অসাধুচক্র যন্ত্রপাতি সরবরাহ না করেই ওই অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এ ধরনের দুর্নীতি গুলোকে বাংলা ব্যাকরণ অনুযায়ী ‘পুকুরচুরি’ না বলে ‘সাগরচুরি’ বলাই ভালো।

ভালোভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন কার্যালয়ে কিছুসংখ্যক অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দুর্নীতির শক্তিশালী বলয় তৈরি হয়েছে। ‘শক্তিশালী’ এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ওষুধ, সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ‘সিন্ডিকেট’ গঠন করে স্বাস্থ্য খাতে জনসাধারণের জন্য বরাদ্দ সরকারি বাজেটের একটি বড় অংশ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এর ফলে জনগণ তাদের প্রত্যাশিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে নিয়মিত বঞ্চিত হচ্ছে। গত বছর দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা, চিকিৎসা সেবায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, ওষুধ সরবরাহসহ ১১টি খাতে দুর্নীতি বেশি হয়।
এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে ২৫ দফা সুপারিশও করে ওই সংস্থা। তখন স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে সংসদেও বহু বার প্রশ্ন উঠেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি থেমে নেই। বরং তা পাগলা ঘোড়ার মতো দ্রুত বেগে চলমান। দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই স্বাস্থ্য খাতের কেনাকাটা, ঋণ ব্যবহারসহ যেসব বিষয়ে অভিযোগ উঠেছে এবং দুর্নীতি হচ্ছে, তা দ্রুত ভালোভাবে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া অত্যাবশ্যক।

নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টেন্ডায় দূর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে গত ২৮ নভেম্বর সিভিল সার্জন, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন, আবুল কাশেম নামের এক ভুক্তভোগী।

জানা যায়, স্মারক নং-সিএসএন/শা- হিসাব শাখা/দরপত্র/২০২৪/৫৫৫৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নোয়াখালী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ২০২৪-২০২৫ খ্রিঃ আর্থিক সনের রোগীদের পথ্য সরবরাহ, স্টেশনারী ও অন্যান্য মনোহারী দ্রব্যাদি/বিবিধ মালামাল সরবরাহ, লিলেন সামগ্রী ধৌত করণ ও পেট্রোল/লুব্রিকেন্ট সরবরাহ এর নিমিত্তে গত ২৯ অক্টোবর ২০২৪ হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নোয়াখালী ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের অধিনে টেন্ডার ড্র হয়।

তিনি মেমার্স নাদিয়া ট্রেডার্স এন্ড ড্রাইক্লিনার্স এর পক্ষে টেন্ডার জন্য প্রদান করেন। টেন্ডারের দরপত্র বিধি মোতাবেক গত ২৯ অক্টোবর ২০২৪ টেন্ডার ড্র হয় কিন্তু ঐদিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মালামালের মূল্য তালিকা প্রকাশ না করে বিভিন্ন তালবাহানার মাধ্যমে সময় কালক্ষেপন করে। টেন্ডারটি কোন প্রতিষ্ঠান পেয়েছে, সেটা প্রকাশ না করে উল্টো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গোপন রেখে তাকে হুমকি প্রদান করে।

এতে তারা প্রমান করে, রাষ্ট্রীয় বিধানকে অমান্য করে। ০৯ নভেম্বর ২০২৪ আবুল কাশেমকে অস্ত্রের মুখে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে অভিযোগ প্রত্যাহারের স্বাক্ষর নেয়। আত্মরক্ষার স্বার্থে ভয়ে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য হয় আবুল কাশেম। তার পর সে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী এসে নিরাপদ বোধ মনে করে তার অভিযোগ প্রদান করেন। পিবিআর ২০০৬ এবং পিপি এ ২০০৮ লঙ্গীত হয়েছে বলে তিনি জানান। যার পরিক্ষীতে প্রতিযোগিতা মূলক প্রতিষ্ঠান গুলোকে যাথার্থ মূল্যায়ন না করে একচোখা হয়ে অবৈধ অর্থ উপটোকন গ্রহন করে কোন প্রতিষ্ঠানকে মূল্যায়ন কমিটি সঠিক মূল্যায়ন না করে সু-নিদ্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে কার্য আদেশ প্রদান করে সুপারিশ করেন।

হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মানষী রানী সরকার কে বার বার কল করে এবং হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ দিয়েও কোন রেসপন্স পাওয়া যায়নি।

জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মাসুম ইফতেখার জানান, হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টেন্ডার অনিয়মের তদন্ত চলমান রয়েছে, সঠিক তদন্ত করে অপরাধী যেই হোক না কেন আইনি ব্যবস্থা নেব।

  • হাতিয়া