৬ শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো পূজা পরিষদের সজল দত্ত স্থায়ী বহিষ্কার

📄🖋: মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ মাস আগে
পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত

চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত ৬ শিল্পীকে গান পরিবেশন করার সুযোগ করে দেন। এ ঘটনায় তাকে পরিষদ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে।

শুক্রবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন স্বাক্ষরিত এক আদেশে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

এর আগে মহানগর পুলিশের এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পূজামণ্ডপে পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের অনুরোধেই গান পরিবেশন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গান পরিবেশনকারী দুজনকে আটক করা হয়েছে।

বহিষ্কারাদেশে বলা হয়, সজল দত্ত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মহানগর পূজা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত সাংস্কৃতিক মঞ্চে চট্টগ্রাম কালচার একাডেমি নামের একটি সংগঠনকে গান করার সুযোগ দেন। ওই সংগঠনের ছয়জন যুবক মঞ্চে উঠে বাদ্যযন্ত্র ছাড়া উপস্থিত সবার সামনে ইসলামি দাওয়াতি গান পরিবেশন করেন। তারা এ কাজের মাধ্যমে ধর্ম অবমাননা করেন এবং এতে সনাতনী ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানে। এ ঘটনার জন্য সম্পূর্ণভাবে আপনিই দায়ী। তাই সংগঠনের জরুরি সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আপনাকে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হলো।

এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের একটি পূজামণ্ডপে ‘ইসলামিক গান’ গাওয়া নিয়ে তীব্র আলোচনা তৈরি হয়। সেই গানের ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নানান আলোচনায় মাতেন নেটিজেনরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ন সম্পাদক সজল দত্তের আহ্বানে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামে একটি সংগঠন ওই পূজামণ্ডপে গান করতে যায়। তবে গান গাওয়ার পরে সনাতন ধর্মের মানুষদের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। তারা ওই সংগঠনটিকে জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে দাবি করছেন। যদিও চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির আহ্বায়ক সেলিম জামান জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ওই গানের দলের ছয় সদস্য গান পরিবেশন করতে মঞ্চে ওঠে। সংগঠনটি শাহ্ আবদুল করিমের লেখা বিখ্যাত গান ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং চৌধুরী আবদুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান’- শীর্ষক গান দুটি পরিবেশন করে। এরমধ্যে শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম, বিশ্ব মানুষের কল্যাণে স্রষ্টার এই বিধান- গানটির ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম নগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল বলেন, আমাদের যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্ত গানের দলটিকে পূজামণ্ডপে নিয়ে এসেছেন। তার উপস্থিতিতেই মঞ্চে উঠে গান পরিবেশন করেছে। তবে ওই সময় আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না।

এদিকে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সভাপতি সেলিম জামানও জানিয়েছেন, পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই তাদের একটি দল পূজামণ্ডপে গান করতে গিয়েছিল।

তিনি বলেন, পূজা উদযাপন পরিষদের সজল দত্ত প্রায় দশদিন ধরে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন। আমাদের কয়েকজন সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেখানে গিয়েছিল। আজ তিনি ফোন করে বলেন, আপনারা একটু আসেন। আপনাদের একটু ফ্লোর (সুযোগ) দেবো। কিছু দেশাত্মবোধাক গান গাইবেন।’ সে আমন্ত্রণে গিয়ে আমাদের দলটি দুটি সম্প্রীতির গান করে। কিন্তু এটি নিয়ে একটি পক্ষ প্রচারণা চালাচ্ছে, ষড়যন্ত্র করতেই আমরা গান করতে গিয়েছি। আমরা জোরপূর্বক কিছুই করিনি। দাওয়াত পেয়েই গিয়েছিলাম।

  • চট্টগ্রাম
  • পূজা