সরকারি বেড়ীর ধারে জীর্ণ কুড়ে ঘরে অর্থনৈতিক কষ্ট দুর্বিষহ জীবনের কষাঘাত এবং বয়সের ভারে নুয়ে পড়া কিতাব আলীর বেঁচে থাকায়ই যেন দায়। তিন ছেলে তিন মেয়ে ও স্ত্রী সহ আট জনের সংসার। এক ছেলে ও এক মেয়ে আবার বাকপ্রতিবন্ধী। অভাব অনটনে কোন রকম কাটছে দিন। ঘরের অবস্থা এতই নড়বড়ে যেন সামান্য বাতাসে ভেঙে পড়বে। স্বাভাবিক সময়ে কোনরকম থাকতে পারলেও একটু বৃষ্টি হলেয় ঘরে থাকা কষ্টকর। হাতিয়ার সোনাদিয়া ইউনিয়নের মাইজচরা গ্রামের দিনমজুর কিতাব আলীর মানবেতর জীবন সংগ্রামের কঠিন চিত্র সামাজিক মূল্যবোধকে যেন বারবার আঘাত করছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে কিতাব আলীর এই দূরাবস্থার বিষয় ছড়িয়ে পড়লে তার পাশে দাড়াতে ছুটে যান সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দ্বীপাঞ্চল হাতিয়া’। কিতাব আলীর জরাজীর্ণ ঘরটি নতুন ভাবে নির্মানের উদ্যোগ নেন তারা।
সংগঠনের সদস্যদের সার্বিক সহযোগিতাই প্রায় সপ্তাহব্যাপী নির্মাণ কাজ সম্পর্ণ করার পর গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরটি হস্তান্তর করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সংগঠনের এডমিন মো: মাইন উদ্দীন, আবদুল্লাহ আল মামুন, ওয়ালী উল্ল্যাহ জনি ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্য সহ সমাজের মান্যগন্য ব্যক্তিবর্গ।
দ্বীপাঞ্চল হাতিয়ার এমন মানবিক কাজে আনন্দিত কিতাব আলীর পরিবার। কিতাব আলী বলেন, ছেলেমেয়ে নিয়ে এই ঘরে থাকতে অনেক কষ্ট হতো। যারা আমাকে ঘরটি করে দিয়েছে আমি আল্লাহর কাছে তাদের সকলের জন্য দোয়া করি।
কিতাব আলীর আনন্দে আনন্দিত পুরো এলাকাবাসী। দ্বীপাঞ্চল হাতিয়াকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা বলেন, এই সংগঠনের মত হাতিয়ার বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ও তরুণরা এগিয়ে আসলে সমাজে কোন অসহায় মানুষ থাকবেনা।
সংগঠনের দায়িত্বশীলরা জনান, দ্বীপাঞ্চল হাতিয়া ২০১৮ সাল থেকে হাতিয়ায় দরিদ্র সুবিধা বঞ্চিত মানুষের চিকিৎসা, স্বাবলম্বী করণ প্রকল্প সহ বিভিন্ন উৎসব আমেজে ত্রাণ বিতরণ থেকে শুরু করে মেধাবী ছাত্রদের শিক্ষা বৃত্তি প্রধান, গৃহায়ন প্রকল্পসহ বেশ কিছু জনহিতকর উন্নয়ন অবকাঠামগত সমাজসেবী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ইতোপূর্বে সুবিধাবঞ্চিত ১৪ টি পরিবারের মাঝে গৃহায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কিতাব আলীর ঘরটি নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে।
তারা আরো জানান, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে পেশী শক্তি খাটিয়ে সংগঠনের সার্বিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। যার কারণে সংগঠনটির এডমিন বা সদস্যদের সৎ ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও দীর্ঘদিন ধরে জনকল্যাণকর কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেনি। ৫ই আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের কাঙ্খিত স্বাধীনতা অর্জিত হওয়ায় দ্বীপাঞ্চল হাতিয়ার কার্যক্রম নতুন ভাবে শুরু করা হয়েছে।