হাতিয়ায় প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মফিজের বিরুদ্ধে ছাত্রীর সঙ্গে অশ্লীল যৌন হয়রানি অভিযোগ

📄🖋: মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৪ সপ্তাহ আগে
মফিজ উদ্দিন সহকারী শিক্ষক দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে রাজনৈতিক ভাবে প্রভাব বিস্তার করে শিক্ষক ও নেতা সেজে, ছাত্রীদের যৌন হয়রানি, উত্যক্ত, অশ্লীল ও অশালীন আচরণ, সহকর্মীদের সঙ্গে বিদ্যালয় অফিস কক্ষে অসদাচরণ, ক্লাসে সময় না দিয়ে প্রাইভেট বানিজ্যে সহ রয়েছে বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্তের অভিযোগ। নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের বিরুদ্ধে।

জানা যায়, মফিজ উদ্দিন, দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসার আগে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩ থেকে ৪ টি স্কুলে বদলি করে দেওয়া হয়, এর পরেও তার অপকর্ম দিন দিন বন্ধ হওয়ার চাইতে আরো বেশি বেড়ে যায়।

জানা যায়, মফিজ উদ্দিন চাকরি জীবন শুরু হয় পূর্ব মাইজচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখানে থাকাকালীন সময়ে মফিজ উদ্দিনের অশ্লীল ও অশালীন আচরণের বিচার চেয়ে তখকার সময়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইলিয়াস বরাবর ৫৪ জন ছাত্র ছাত্রী স্বাক্ষরিত লিখিত অভিযোগ প্রধান করে। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, বিকেলের কোচিং ক্লাসের সময় অফিস কক্ষে এক ছাত্রীকে ডেকে নিয়ে যায়, শীলতাহানির জন্য অনেকক্ষণ হাত ধরে টানাটানি করে, বুকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে, এবং তার গোপন অঙ্গে হাত দেয়, তার চিৎকারে অন্য ছাত্র ছাত্রী চলে আসলে মফিজ উদ্দিন হাত ছেড়ে দেয়। এবং ক্লাস চলাকালীন সময়ে ছাত্রীদের বুকে ও শরীরে অশালীন ভাবে হাত দেয় বলে অভিযোগ দেয় আরো বেশ কয়েকজন ছাত্রী, যার কারনে অনেক ছাত্রী স্কুল ছেড়ে চলে যায়। আমরা মফিজ মাস্টারের বিচার চাই। ছাত্রীদের এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পূর্ব মাইজচরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ ইলিয়াস ২৯ সেপ্টেম্বর ১৪ ইং তারিখে হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রধান করেন। এর পর মফিজ উদ্দিনকে পূর্ব চরচেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করে দেওয়া হয়।

জানা যায়, মফিজ উদ্দিন পূর্ব চরচেঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও প্রাইভেট বানিজ্যের অভিযোগে বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবকরা ৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করে। অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করে মফিজ উদ্দিনের শশুর স্কুলের সভাপতি ও দাতা পরিবারের সদস্য হওয়ায় কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না, এবং মফিজ উদ্দিন ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ লিখিত অভিযোগ পত্র প্রধান শিক্ষককে দেওয়া হলেও তারা প্রতিকার পান নি। ৪ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে জে এস সি পরীক্ষার্থী জনৈক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়ানোর নাম করে অফিস কক্ষে দরজা বন্ধ করে দীর্ঘ সময় রাখার পর ছাত্র ছাত্রীরা বারবার দরজায় আঘাত করার পর দরজা খোলেন এবং ছাত্রীকে আপত্তিজনক বিবস্ত্র অবস্থায় দেখায় যায়। উক্ত ঘটনা জানাজানি হলে উক্ত এলাকার ইউপি সদস্য আবদুল গাফফার, বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মফিজ উদ্দিনের কুকর্ম প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও তাকে অত্র বিদ্যালয়ে হতে অপসারণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জরুরী সবার রেজুলেশন দাখিল করবার কথা বলে আশ্বাস দিলেও পদক্ষেপ নেন নাই। পরবর্তীতে তাকে দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়।

১১ জুন ২০২৪ তারিখে দক্ষিণ রাজের হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজল রানী পাল, সহকারী শিক্ষক রাজীব চন্দ্র দাস ও মফিজ উদ্দিন বিদ্যালয় অফিস কক্ষে অসদাচরণ করার অভিযোগে হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ পত্রে প্রধান শিক্ষক কাজল রানী পাল উল্লেখ করেন সহকারী শিক্ষক রাজীব চন্দ্র দাস প্রধান শিক্ষক থেকে ০৪ জুন থেকে ৬ জুন নৈমিত্তিক ছুটি নেয় এবং এর মফিজ উদ্দিন ১০:০৫ মিনিটে অফিসে উপস্থিত হয়। এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেন আমি আপনার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে জানাবো, এই কথা বলায় মফিজ উদ্দিনের অভিযোগ অত্র ইউনিয়নে ২৭ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে কোন বিদ্যালয়ই ৯ টা থেকে ৪ টা নিয়ম মানে না। তখন প্রধান শিক্ষক বলেন ২৭ টি বিদ্যালয়ে মানুক আর না মানুক সরকারি নিয়ম আপনাকে মানতে হবে। এই বলার সাথে সাথে প্রধান শিক্ষককে মফিজ উদ্দিন এবং রাজীব চন্দ্র অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মেন্টাল বলে দুজনেই হাসাহাসি ও ঠাট্টা করতে থাকে। এবং অফিস কক্ষে ছাত্র ছাত্রীরা জড়ো হয়ে যায়। তারা দুজনেই প্রধান শিক্ষককে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকে।

এই বিষয়ে তার মন্তব্য নেওয়ার জন্য সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিনকে বারবার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হই যার কারনে তার মন্তব্য নেওয়া সম্ভব নয় নি।

এসব বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল জব্বার বলেনঃ আমি দুজনের বিরুদ্ধে তদন্ত করে সঠিক তথ্যের অনুসারে জেলা বরাবর দরখাস্ত দিয়েছি। এবং জেলা থেকে এখনো পর্যন্ত আমাকে কিছু বলেনি।

এই বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার এম মনছুর আলী চৌধুরী বলেন, সহকারী শিক্ষক মফিজ উদ্দিন ও রাজীব চন্দ্র দাস এর বিরুদ্ধে আমি অভিযোগ পেয়েছি, আমি দ্রুত এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

  • হাতিয়া