হাতিয়ায় প্রধান শিক্ষকের সরকারি অর্থ আত্মসাৎ,মাঝি ও প্রধান শিক্ষক থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ

📄🖋: মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে
প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন, বিএনপি নেতা আলমগীর, আজহার ও মফুল

চাঁদাবাজি ধান্দার কাছে জীবনযাত্রা বাঁধা পড়ে আছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই চলছে চাঁদাবাজির ধকল। ব্যবসা-বাণিজ্য নিশ্চিত রাখতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান টেকাতে, সর্বোপরি প্রাণ বাঁচাতেও কাউকে না কাউকে চাঁদা দিতে হচ্ছে। হাতিয়ায় চাঁদাবাজি থামছে না কিছুতেই। হাতিয়ার ফুটপাথ থেকে শুরু করে নির্মাণাধীন বহুতল ভবন পর্যন্ত, তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়েও প্রভাব বিস্তার করে চলছে চাঁদা। নৌপথ, নৌ-ঘাট, পরিবহন, ডিস, ইন্টারনেট প্রোভাইডার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি-কোচিং বাণিজ্যসহ অনিয়ম-দুর্নীতি টিকিয়ে রাখতে ম্যানেজিং কমিটিকেও এখন নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়।

ভুক্তভোগীদের মতে, যারা আগে আওয়ামী লীগ সমর্থন করতো তারাই এখন বিএনপির নাম ক্ষুন্ন করে চাঁদাবাজি সহ অবৈধ কর্মকাণ্ড সবই করছে। এবং দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।

নোয়াখালী জেলার হাতিয়ার উপজেলার তমরদ্দি ইউনিয়নে ও অন্যান্য জায়গার মত এখানেও থেমে নেই চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী,ও লুটপাট, লুটতরাজ ইত্যাদি সহ নানান কর্ম কান্ড, প্রতিনিয়তই ঘটছে সব কিছু।

হাতিয়া

সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর সাথে বিএনপি নেতা ফারহান উদ্দিন

জানা যায় তমরদ্দি ইউনিয়নের বিএনপি নেতা আলমগীর সহ আরো অনেক বহু প্রভাবশালী নেতা আওয়ামী লীগ করতো, এখন তারাই বিএনপির নেতা এই পদকে হাত করে প্রতিনিয়ত চাঁদাবাজি সহ অবৈধ কর্মকাণ্ড সবই করছে, ভয়ে মুখ খুলতে পারে না এলাকাবাসী। আর এই সব কিছুই হাতিয়া উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মোঃ আলমগীর হোসেন তার সহযোগী মফুল ও আজহার আরো অনেকে সহ পুরো তমরদ্দি ইউনিয়নে তারা তমরদ্দি ঘাটে বর্তমানে নৈরাজ্য সৃষ্টি থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মকাণ্ডে তারা নিয়মিত যুক্ত।

হাতিয়া

আগে যারা আওয়ামী লীগ করতো তারাই এখন বিএনপি

সম্প্রতি বিএনপি নেতা আলমগীর, ফারহান উদ্দিন ও এনায়েত সহ অনেকে বিরুদ্ধে দ্যা ঢাকা নিউজে হাতিয়া তমরদ্দি ইউনিয়নে চলছে রমরমা চাঁদাবাজি এই নিয়ে একটা লিড় নিউজ হয়, তার পর থেকে তার পর আরো আলমগীরের চাঁদাবাজির ডকুমেন্টস আসতে থাকে, তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে অভিযোগ করেছেন তমরদ্দি হাই স্কুলের প্রাধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন ও। এবং তমরদ্দি ঘাটের বেশ কয়েকজন মাঝি।

হাতিয়া

সস্তা রড, সিমেন্ট,ইট দিয়ে তমরদ্দি হাই স্কুলের শহীদ মিনার ও রোডের কাজ

জানা যায় তমরদ্দি হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের শহীদ মিনার ও লিং রোডের জন্য ১৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার একটা বাজেট আসে, প্রধান শিক্ষক রাস্তার কাজে লো ব্যান্ডের সিমেন্ট দিয়ে এবং রড দিয়ে রডের পরিমাণ সিমেন্টের পরিমাণ কম দিয়ে কাজ করেছেন। দেখায় যায় ২০ সেপ্টেম্বর সাহাব উদ্দিন ৩৭০ কেজি রড নেন, ইঞ্জিনিয়ার নিলয় ভৌমিক চলে যাওয়ার পরে ২২৩ কেজি ফেরত দেওয়া হয়, মানে ১৪৭ কেজি রড দিয়ে কাজ চালায়। মানে সব কিছু সস্তা জিনিস দিয়ে করছেন, মানে হিসেন অনুযায়ী ৭ লক্ষ টাকার কাজ হয়েছে বাকী ৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার হিসেব নেই। সেখান থেকেও কাজ বন্ধ রেখে চাঁদা দাবী বিএনপি নেতা আলমগীরের বলছেন প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন।

হাতিয়া

আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম রাতুলের সাথে বর্তমান বিএনপি নেতারা

তমরদ্দি হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাহাব উদ্দিন বলেন,
আমার স্কুলের জন্য আমি শহীদ মিনার সহ রোডের একটা কাজ পাই ১৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকার, তার পর থেকে আমি কাজ শুরু করি এর পরপরই আলমগীর, হাফেজ নোমান, ও এনায়েত সহ আমার কাছে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করে, আমি না দিলে আমার কাজ বন্ধ করে দেয়। কাজ বন্ধ করে দিলে আমি হাতিয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানাই। তিনি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন, আমি কাজ বন্ধ করিনি, একটু একটু করে কাজ চলমান রাখি, অনেক হেনস্তার পরে কাজটা কমপ্লিট করি।

তমরদ্দি ঘাটে প্রতিনিয়ত ছোট বড় বহু নৌকা এসে ভিড়ে, যত টিপ হবে ততবারই চাঁদা দিতে হয় এই নেতা দের। জানা যায় মাঝি দের থেকে মফুল এর হুকুমে টাকা কালেকশন করে আজহার তার পর আজহারের মারফত হয়ে বিএনপি নেতা আলমগীরের কাছে পৌঁছায়।

তমরদ্দি ঘাটের রুবেল চেরাং, আকবর কেরানী, বাবুল চেরাং, বিটু কেরানী, জাবের চেরাং সহ আরো অনেকে বলেন আমাদের থেকে প্রতি টিপে প্রতি নৌকা ছোট থেকে ৫০০ টাকা আর বড় গুলো থেকে ১০০০ টাকা নেয় এই আজহার, ও মফুল তাদের হাত হয়ে যায় বিএনপি নেতা আলমগীরের কাছে। তারা বলেন আমরা নিরুপায় আমরা না দিলে আমাদেরকে অনেক অত্যচার করে, তাই ভয়ে আমরা কিছু বলি না। তারা বলেন আগে আওয়ামী লীগ নেতারা নিতো এখন বিএনপি নেতারা নেয়, পরিবর্তন তো কিছুই হয়নি।

এই বিষয়ে বিএনপি নেতা আলমগীর বলেনঃ আমি সব চাঁদাবাজির সাথে জড়িত নাই। কেউ বলতেও পারবে না।
আর আমি মফুল ও আজহার কে বা কারা আমি তাদেরকে ছিনি না, আমার সাথে আজহার ও মফুল এর সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক নেই।

এসব বিষয়ে মফুল সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি টাকা কালেকশন করি না, টাকা কালেকশন করে আজহার তার মারফতে আলমগীরের কাছে যায়। তিনি বলেন এক খাতার নিচে শুয়ে থেকে আমাকে ও আজহার কে ছিনে না এটা ভুল কথা। তবে আমরা যা করেছি এখন থেকে আর কখনো করবো না।

এই বিষয়ে আজহার থেকে জানতে চেয়ে বার বার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া হয়নি, মফুল বলেন আজহারের ফোন বেশির ভাগ সময় বন্ধ থাকে সময় হলে খোলে তার পর বন্ধ করে দেয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান,
তমরদ্দি ঘাটে ও বাজারে এগুলো নিত্য দিনের একটা রুটিন হয়ে গেছে, আগে যেমন ছিলো এখনো ঠিক তেমনি আছে, পরিবর্তন হয় কিনা জানা নেই। হাসিনা সরকারে পতনের পরে আমারা মনে করছি আমাদের সব অধিকার ফিরে পাবো কিন্তু এখনো সেটা হয়নি কিছু নেতার কারনে। এখনো নেই বলার স্বাধীনতা, কিছু বললেই মুখ চেপেই ধরবে।

এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ কে এম ফজলুল হক খোকন বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান মহোদয় যে কোন অপরাধের বিষয়ে দল থেকে জিরো টলারেন্স অলরেডি দিয়েছেন। আমিও তাই বলবো, কোন অপকর্ম কারী বিএনপি দলে থাকতে পারবে না। আপনি যে বিষয় টা বললেন যদি তার অভিযোগটা প্রমানিত হয় তবে অবশ্যই দল তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে এতে কোন সন্দেহ নেই। অলরেডি তাকে দল থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে।

নোয়াখালী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবদুর রহমান জানানঃ বিভিন্ন অপকর্ম চাঁদাবাজি ও অনিয়ম এর কারণে আমাদের দল থেকে তাকে অলরেডি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে, এবং সঠিক তদন্ত করে দল তার বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নিবে।

বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেনঃ আমাদের নেতা জনাব তারেকে রহমান এর নির্দেশ অপকর্ম যেই করবে না কেন, দল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে। অপকর্মকারীদের জাতীয় দল বিএনপিতে জায়গা নেই। আলমগীরের বিষয়ে আমরা অলরেডি তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি, আমরা সঠিক তদন্ত করতেছি, এবং দল তার বিরুদ্ধে সঠিক ব্যাবস্থা নিবে।

এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মনিরুজ্জামান বলেনঃ আমরা এখনো কোন তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাইনি, পেলে সাথে সাথে ব্যাবস্থা দিবো।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার ভূমি মিল্টন চাকমা বলেনঃ আমরা লিখিত কোন অভিযোগ পাইনি পেলে আইনি ব্যাবস্থা নিব।

  • সরকারি অর্থ
  • হাতিয়া