হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটের তেলের জাহাজ দখল করে নিলেন পিএস আফসার

📄🖋: মামুন রাফী, স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১ সপ্তাহ আগে
হাতিয়ার তমরুদ্দি ঘাটের তেলের জাহাজ দখল করে নিলেন পিএস আফসার

নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বাণিজ্যিক প্রাণকেন্দ্র তমরুদ্দি ঘাটের ভাসমান ডিজেল বিক্রির জাহাজ দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা বিএনপি নেতা প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) আবুল হায়াত আফসারের বিরুদ্ধে। তার সঙ্গে এই কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোছলেহ উদ্দিন নিজাম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আহমেদ হোসাইন (হাসান) ও উপজেলা বিএনপির ক্রীড়া সম্পাদক আলী আজগরের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি তারা কোম্পানির মালিককে হুমকি দিয় এই ব্যবসাটি দখল করে নেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্বীর্ঘ ২০ বছর ধরে ভাসমান জাহাজের মাধ্যমে হাতিয়া দ্বীপে ডিজেল সরবরাহ করে আসছেন বরিশালের খান ব্রাদার্স নামে একটি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানটির হাতিয়া দ্বীপে স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে ব্যবসা করে আসছেন তমরুদ্দি বাজার বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন। ৫ আগস্টের পরিবর্তীত প্রেক্ষাপটের পর তার বিরুদ্দে একের পর এক মামলা দিয়ে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য করেন প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের ব্যক্তিগত সহকারী আফসার। এসময় তার ব্যবসায় আফসার ও তার লোকদেরকে পার্টনার হিসেবে না নিলে তার বিরুদ্ধে আরও মামলা দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। পাশাপাশি তার মাধ্যমে তেলের জাহাজ হাতিয়ায় না পাঠালে জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেয়ারও হুমকির অভিযোগ উঠেছে পিএস আফসারের বিরুদ্ধে।

তবে তেল সরবরাহের মূল কোম্পানি অফসারের এমন হুমকিতে প্রথমে কর্ণপাত না করে সোনাদিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলামকে তারা নতুন প্রতিনিধি নিয়োগ দেন। কিন্তু এতে অফসার আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের নাম ব্যবহার করে তমরুদ্দি ঘাটে পৌঁছা তেলের জাহাজ দখল করে নেন। এতে কোম্পানি তার তেলের জাহাজের নিরাপত্তার জন্য আফসারের সঙ্গে মোখিক সমঝোতায় যেতে বাধ্য হন। আলাউদ্দিনকে মামলায় না জড়ানোর শর্তে তার পুরো ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন অফসার ও তার পার্টনাররা। ব্যবসা দখলের জন্য আলাউদ্দিনকে এখন পর্যন্ত ৩টি মামলার আসামী করা হয়। ব্যবসা ছেড়ে না দিলে কিংবা তাদেরকে সঙ্গে না নিলে তাকে আরও মামলায় জড়ানো হবে বলেও হুমকি দেন পিএস আফসার।

এছাড়া কোম্পানির কর্ণধার সেন্টু খানকে তার লোকের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য একের পর এক ফোন করে হুমকি দেন। তার লোককে ব্যবসা না দিলে ডিজেলের জাহাজে আগুন লাগিয়ে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেয়া হয়। এভাবেই কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা দখল করে নেন আফসার। এ নিয়ে বেস কয়েকটি অডিও রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক করছে। তবে এখন পর্যন্ত কোম্পানী তাদের সঙ্গে লিখিত কোনও চুক্তিতে যায়নি। বর্তমানে আফসারের তত্বাবধানে জোর করে তেল খালাস করছেন উপজেলা বিএনপি নেতা আহমেদ হোসাইন (হাসান) ও আলী আজগর।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি কারো জন্য কোনও তদ্বির করিনি। আমি তদ্বির করার লোক না। কেউ যদি বৈধভাবে ব্যবসা করে আমি তাতে কেন বাধা দিবো। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে আমি কারো ব্যবসায় বাধা দানে বিশ্বাসী না। এমন রেকর্ড আমার নেই।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোছলেহ উদ্দিন নিজাম বলেন, ‘আমি এর সঙ্গে জড়িত নয়। কোম্পানি প্রথমে এটা আমাকে দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু পরে রফিকুল ইসলাম নামে একজনকে দেয়ার পর আমি সেখান থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। আজিম সাহেবের পিএস এর সঙ্গে জড়িত। তিনি কোম্পানীর মালিককে ফোন করেছেন। বর্তমানে হাসান এটা দেখা শোনা করছে। তবে আজিম সাহেব এসবের কিছুই জানেন না।

তবে পিএস আফসারের এ সংক্রান্ত একটি অডিও ফাঁস হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। পরে ফেসবুক এক পোস্টে আহমেদ হোসাইন হাসান বলেন, ‘বাস্তবতা হলো এ ব্যাবসার একমাত্র বৈধ মালিকানা এনায়েত খাঁ নামক বরিশালের এক তেল ব্যাবসায়ীর। ওনাকে নির্দিষ্ট পরিমান সিকিউরিটি মানি জমা দিয়ে তেল বিক্রির এজেন্ট হতে হয়। পূর্বের এজেন্ট আলাউদ্দিন মিয়ার দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে তেল কোম্পানি তমরদ্দী ঘাট এলাকায় কোন স্হায়ী এবং বৈধ এজেন্ট নিয়োগ দেন নাই, এবং বিগত এক দু মাস অবধি রফিক নামীয় একজন তেল কোম্পানির সাথে সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছিলো। কিন্ত তেল কোম্পানির প্রদত্ত শর্তাবলী পূরণে অপারগতা প্রকাশ করায় এবং কোম্পানীর সাথে সহযোগিতা না করায় তেল কোম্পানি নতুন এজেন্ট (আনলোড) খুঁজতে থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমি স্ব প্রণোদিত হয়ে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করলে এবং সাবেক সংসদ সদস্য প্রকৌশলী ফজলুল আজিম সাহেবের অনুরোধ ওনারা আমাকে এজেন্ট (আনলোড মাত্র) হওয়ার নিমিত্তে কিছু শর্তাবলী দেয় এবং সমস্ত শর্তাবলী মেনেই আমাকে এজেন্ট (আনলোড) নিয়োগ দেয় এবং তেলবাহী জাহাজ তমরদ্দী ঘাটে প্রেরণ করে। বর্তমানে তারা আমার সঙ্গে চুক্তি করে। তবে কোম্পানির মালিক সেন্টু খান জানান, এখনো তার সঙ্গে অন্য কারো সঙ্গে লিখিত কোনও চুক্তি হয়নি।

জানতে চাইলে সাবেক ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, এই ব্যবসাটির কারণে আমাকে একের পর এক মামলায় আসামী করা হচ্ছে। অথচ যেসব মামলা হচ্ছে এসবের কোনটির সঙ্গে আমি জড়িত নয়। এসব ঘটনা অনেক পুরানো। আমার ব্যবসা দখল করার জন্যই আমাকে উদ্দেশ্য প্রণোধিতভাবে আসামী করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে কোম্পানির মালিক সিন্টু খান বলেন, আমি এখন পর্যন্ত কারো সঙ্গে কোনও চুক্তিতে যায়নি। পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে চিন্তাভাবনা করবো হাতিয়ায় ব্যবসা করবো কী করবো না।

তবে অভিযোগে বিষয়ে একাধিকবার ফোন করলেও পিএস আবুল হায়াত আফসার ফোন ধরেননি। হোয়ার্সঅ্যাপে প্রশ্ন লিখে পাঠালেও তিনি কোনও উত্তর দেননি।

  • হাতিয়া