সামাজিক জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব

📄🖋: রুবিনা আক্তার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে
সামাজিক জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব

আদর্শ ও সুশৃঙ্খল সমাজ গঠনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। রাসুলুল্লাহ (সা.) শিষ্টাচারের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেন, ‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের ২৫ ভাগের এক ভাগ।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৬)

শিষ্টাচার হলো ভদ্র, মার্জিত ও রুচিসম্মত আচরণ, যা মানুষকে সংযমী ও বিনয়ী করে তোলে। এই গুণটি হঠাৎ করেই কারো মধ্যে গড়ে ওঠে না; এর জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতির প্রয়োজন। শিষ্টাচারের বীজ মূলত শিশুকালে বপন করা হয়। এ ক্ষেত্রে পারিবারিক ভূমিকাই প্রধান। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়, তাই পরিবারের বড়রা যে ধরনের ব্যবহার করে, শিশুরাও তা অনুসরণ করে।

নিম্নে প্রতিদিনের জীবনে ইসলামী শিষ্টাচারের কিছু দিক তুলে ধরা হলো—

প্রতিদিনের জীবনে শিষ্টাচার:

জীবনের প্রতিটি কাজ একটি নীতি-আদর্শ অনুসারে বা শিষ্টাচার অনুযায়ী করতে হয়। শৃঙ্খলা মেনে চললে সমাজে ভারসাম্য বজায় থাকে। নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে সে কাজ সুচারুরূপে সম্পন্ন হয় না এবং কাঙ্ক্ষিত ফলও অর্জিত হয় না। মানুষের সঙ্গে ওঠাবসা, পানাহার, বসবাস ও সহাবস্থান সমাজজীবনের মৌলিক কাজ। এসব প্রাত্যহিক কর্মকাণ্ডে শিষ্টাচারের সর্বোত্তম উদাহরণ হলেন মহানবী (সা.)। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ (সুরা: আল-কলম, আয়াত: ৪)

সালাম বা সম্ভাষণ :

ইসলামী জীবন বিধানে ছোট-বড়, পরিচিত-অপরিচিত সবাইকে সালাম দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সালামের জবাব দেওয়ার জন্যও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যখন তোমরা সালাম ও অভিবাদনপ্রাপ্ত হও, তখন তোমরা তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর সম্ভাষণ করো অথবা একইভাবে অভিবাদন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব বিষয়ে হিসাব গ্রহণকারী।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮৬)

প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করা : 

প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করা মুসলমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য। সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া হারাম। আবু শুরাইহ (রা.) থেকে বর্ণিত, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ, সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ, সে মুমিন নয়, আল্লাহর শপথ, সে মুমিন নয়।’ জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল, কে সে? তিনি বললেন, যার প্রতিবেশী তার অত্যাচার থেকে নিরাপদে থাকতে পারে না। ’(মিশকাত, হাদিস : ৪৯৬২)

বিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা:

শিষ্টাচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালোবাসেন।’ (সুরা: বাকারাহ, আয়াত: ২২২)

রাগ না করে হাসিমুখে কথা বলা:

রাসুলুল্লাহ (সা.) সবসময় মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন এবং ক্রোধ থেকে বিরত থাকতেন। তিনি বলেন, ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫৬)

কুধারণা পরিহার করা : 

এক মুসলিমের উচিত অন্য মুসলিম ভাইয়ের প্রতি সদর্থক ধারণা পোষণ করা—এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটি মানবতার মুক্তির দূত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ। নেতিবাচক ধারণা পরিবার, সংসার ও প্রতিষ্ঠান—সবকিছুই ধ্বংস করে দেয়। ইসলামে নেতিবাচক ধারণা পাপ। কোনো মানুষের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা উচিত নয়। কারণ এতে মানুষ কষ্ট পায়। আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমরা বেশি বেশি ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। নিশ্চয়ই কিছু কিছু ধারণা পাপ।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১২)

আন্তরিকতা ও নিরাপত্তা: 

ইসলামে এর গুরুত্ব অপরিসীম। জীবনের পথে যদি কারো মধ্যে কোনো খারাপ আচরণ দেখা যায়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে হিকমতের সঙ্গে বোঝানো উচিত, যাতে সে সংশোধন হতে পারে। অন্যের ক্ষতি থেকে তাকে রক্ষা করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা জরুরি। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এক মুমিন অন্য মুমিনের জন্য আয়নার মতো এবং এক মুমিন অন্য মুমিনের ভাই। তারা একে অপরকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং তার অনুপস্থিতিতে তাকে সুরক্ষা দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪৯১৮)

  • ইসলামী জীবন
  • সামাজিক শিষ্টাচার