মানুষের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যে যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তা মূলত সৃষ্টিগত। আল্লাহ মানুষকে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশ থেকেও মানুষ কিছু বৈশিষ্ট্য অর্জন করে। শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.) বলেন, ‘জেনে রেখো, মানুষের কিছু বৈশিষ্ট্য এমন যে তা মানুষ হিসেবে সৃষ্টিগতভাবেই পেয়ে থাকে।
এছাড়া কিছু বৈশিষ্ট্য তার বৈষয়িক, যা তার পারিপার্শ্বিকতা ও দূরবর্তী কোনো প্রভাব থেকে আসে।’ (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ : ১/১৬২)
মানুষের ইহকালীন সাফল্য ও পরকালীন মুক্তি যেসব বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভরশীল, তা পরিবর্তনশীল। হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজালি (রহ.) উল্লেখ করেন, চরিত্র পরিবর্তনশীল। যদি চরিত্রে পরিবর্তন না হতো, তবে ওয়াজ, নসিহত, শাসন ইত্যাদি অর্থহীন হয়ে পড়তো এবং রাসুলুল্লাহ (সা.) কেন বলতেন যে, ‘তোমরা তোমাদের চরিত্র সুন্দর করো’।
মানুষের পাশাপাশি, এই পরিবর্তন পশুপাখির মধ্যেও দেখা যায়। যেমন—বাজপাখির পলায়নপর স্বভাব মানুষের সংস্পর্শে এসে পরিবর্তিত হয়। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিকারি কুকুর কিভাবে সুশিক্ষিত হয়ে ওঠে, তা লক্ষ্যণীয়। সে শিকার ধরে, কিন্তু লোভ হওয়া সত্বেও তা খায় না।
যখন পশুপাখির মধ্যে পরিবর্তন আসে, তখন মানুষের স্বভাব-চরিত্রেও পরিবর্তন আসা অসম্ভব নয়। মানবপ্রকৃতি ও স্বভাবের মূলোৎপাটন করা আমাদের সাধ্যাতীত। তবে এগুলোকে দমন করা এবং অধ্যবসায় ও সাধনা দ্বারা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আমাদের প্রতি আদেশও তাই এবং এটাই আমাদের মুক্তি ও আল্লাহর কাছে পৌঁছানোর উপায়। (ইহয়াউ উলুমিদ্দিন : ৩/২৪৭) ইসলামের আলোকে চরিত্র গঠনের মূল কথা হলো মানুষের জীবসত্তার ওপর মানবসত্তাকে প্রাধান্য দেওয়া এবং মানবিক গুণাবলির বিকাশ ঘটানো।
এটি হবে বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, কামশক্তি ও ক্রোধশক্তির সমতা এবং এগুলোকে শরিয়তের নির্দেশনার প্রতি আনুগত্যের মাধ্যমে। শরিয়তের আনুগত্য দুইভাবে হতে পারে—
ক. আল্লাহর দান হিসেবে জন্মগতভাবে জ্ঞানী ও চরিত্রবান হওয়া, যেমন আল্লাহ নবী-রাসুলদের করেছিলেন।
খ. চেষ্টা ও সাধনার মাধ্যমে চারিত্রিক গুণাবলি অর্জন করা। যার যে বিষয়ে অপূর্ণতা আছে, সে সেই বিষয়ে চেষ্টা ও সাধনা করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ইবাদত সন্তুষ্টির অবস্থায় করো। যদি সক্ষম না হও, তবে অসহনীয় বিষয়ে ধৈর্য ধারণের মধ্যে অনেক বরকত আছে।’