হাদিসের বর্ণনায় চোখের পাপ সম্পর্কে আলোচনা

📄🖋: রুবিনা আক্তার
প্রকাশ: ৩ সপ্তাহ আগে
হাদিসের বর্ণনায় চোখের পাপ সম্পর্কে আলোচনা। ছবি: সংগৃহীত

চোখ অন্তরের রাজকীয় প্রবেশদ্বার। অন্তরে পাপ প্রবেশের জন্য এটি একটি প্রশস্ত পথ। চোখের কারণে মানুষ অনেক খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়ে। চোখ অন্তরের ধ্বংসকে ত্বরান্বিত করে।

কোরআন-হাদিসে দৃষ্টি সম্পর্কে মানুষকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। চলুন, চোখের পাপের ভয়াবহতা হাদিস থেকে জানি।

চোখের হেফাজতে আল্লাহর নির্দেশ:

চোখ আল্লাহ কর্তৃক বান্দাকে প্রদত্ত একটি মহান নিয়ামত। তিনি আমাদের চোখ দিয়েছেন নিদর্শনাবলি দেখার জন্য। বান্দার উচিত এই নিয়ামত ব্যবহারে তাঁর স্রষ্টাকে চেনা এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা। আল্লাহ বলেছেন, ‘দেখো, আমি কিভাবে নিদর্শনাবলি বর্ণনা করি, যাতে তারা বুঝে নেয়।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৫)

দৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীর:

মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করতে শয়তান যে সব অস্ত্র ব্যবহার করে, তার মধ্যে মানুষের দৃষ্টি অন্যতম। দৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীর। ইবনু মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দৃষ্টি শয়তানের বিষাক্ত তীর। যে ব্যক্তি আল্লাহর ভয়ে তার দৃষ্টিকে সংরক্ষণ করবে, আল্লাহ তাকে এমন ঈমান দান করবেন, যার মিষ্টতা সে তার অন্তরে অনুভব করবে।’ (তাবরানি, হাদিস : ১০৩৬২)

দৃষ্টির অরক্ষণ মনকে অশান্ত করে:

চোখের অনৈতিক ব্যবহারে মন অশান্ত হয়ে যায়। না পাওয়া এবং আক্ষেপের আগুনে দগ্ধ হতে হয়। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তার আফসোস ও মনোবেদনা স্থায়ী হয়ে যায়। অন্তরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো চোখকে ছেড়ে দেওয়া এবং উন্মুক্ত করে দেওয়া। কারণ, এটি তাকে এমন জিনিস দেখায়, যা থেকে সে ধৈর্য ধারণ করতে পারে না এবং তা অর্জনও করতে পারে না। আর এটি অত্যন্ত কষ্টদায়ক। (রওজাতুল মুহিব্বিন, পৃষ্ঠা-১১৩)

অযাচিত দৃষ্টির পর আবার দৃষ্টি নয়:

অযাচিত নিষিদ্ধ বস্তুতে দৃষ্টি দেওয়ার ব্যাপারে মানুষের সর্বদা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা উচিত। যেন হারাম কোনো বস্তুতে চোখ আটকে না যায়। যদি দৃষ্টি পড়ে যায়, তাহলে দ্রুত চোখ সরিয়ে নেওয়া একজন সাচ্চা মুসলিমের কর্তব্য। নবীজি (সা.) আলী (রা.)-কে বলেছিলেন, হে আলী! দৃষ্টিকে দৃষ্টির অনুসরণ কোরো না (অযাচিত দৃষ্টির পরে ইচ্ছাকৃত দৃষ্টি দিয়ো না); কারণ প্রথমটি তোমার জন্য বৈধ হলেও দ্বিতীয়টি অবৈধ। (তিরমিজি, হাদিস : ২৭৭৭)

ব্যক্তির বিরুদ্ধে চোখের সাক্ষ্যদান:

কিয়ামতের দিন মানুষের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তার পক্ষে অথবা বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে। ভালো কাজের স্বীকারোক্তির সঙ্গে সঙ্গে খারাপ কাজগুলোর বর্ণনা দেবে অকপটে। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তর এদের প্রত্যেকটিই জিজ্ঞাসিত হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)

অবৈধ বস্তুর প্রতি তাকানোর শাস্তি:

হারাম বস্তু থেকে আমাদের চোখ সরানো কঠিন হয়ে পড়ে। পরনারী কিংবা পরপুরুষ দেখলে চোখ ফেরানোর বদলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখি। নাটক, সিনেমা, টিভি কিংবা সিনেমার পর্দায়, মোবাইলের স্ক্রিনে, পোস্টার আর বিলবোর্ডে সর্বত্র চোখের খিয়ানত। চোখের পাপ। এ পাপ থেকে কি মাফ পাওয়া যাবে? আবু হুরায়রা (রা.) নবীজি (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, ‘চোখের জিনা (হারাম জিনিসের প্রতি) তাকানো।’ (বুখারি, হাদিস : ৬১২২)

চোখের পাপ থেকে বাঁচতে:

চোখের অপরাধ থেকে বাঁচতে অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করা আবশ্যক। সামর্থ্য থাকলে দ্রুত বিবাহ করা উচিত, নচেত রোজা রাখা উচিত। হারাম দৃষ্টিপাতের ভয়াবহতা হৃদয়ে জাগরুক রাখা চাই। যেসব জায়গায় চোখের খিয়ানত হয়, সেসব জায়গায় যাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখা উচিত। খারাপ কিছু দেখলে দ্রুত ইস্তিগফার করা। সর্বোপরি, পূর্ণ একনিষ্ঠতার সঙ্গে নামাজ আদায় করা উচিত।

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে হেদায়েত দান করুন। আমীন।

  • ইসলামী জীবন
  • ইসলামের আলো