নারীদের সৌন্দর্য বা রূপচর্চায় ইসলামের নীতি

📄🖋: রুবিনা আক্তার
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে
ছবি: সংগ্রহীত

নারীদের রূপচর্চায় ইসলামের নীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলে, এটি স্পষ্ট যে ইসলাম নারীদের সৌন্দর্য এবং রূপচর্চার ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক নীতি নির্ধারণ করেছে। ইসলামে রূপচর্চা করা একটি স্বাভাবিক বিষয়, তবে এটি অবশ্যই ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী হতে হবে। নারীদের জন্য সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তাদের আত্মমর্যাদা এবং নৈতিকতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। তবে রূপচর্চার বিষয়টি নারীদের সঙ্গে বেশি সম্পর্কিত। এটি তাদের স্বাভাবিক একটি প্রবণতা। ইসলাম এই মানসিকতাকে গুরুত্ব দিয়ে কিছু মূলনীতি নির্ধারণ করেছে।

ইসলামী শরিয়ত নির্দেশিত সীমারেখা মেনে নারীদের রূপচর্চা করা উচিত।

রূপচর্চার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:

নারীদের রূপচর্চার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো স্বামীর সন্তুষ্টি অর্জন করা। স্বামীকে খুশি করার জন্য এটি তাদের এক ধরনের ইবাদত। সদ্য বিবাহিত স্ত্রীরা অনেক সময় ধার করে জিনিস নিয়ে সাজসজ্জা করার কথাও শোনা যায়। আয়মান (রহ.) বলেন, আমি আয়েশা (রা.)-এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন তার গায়ে পাঁচ দিরহাম মূল্যের মোটা কাপড়ের কামিজ ছিল। তিনি আমাকে বললেন, আমার এ বাদিটার দিকে একটু তাকাও, ঘরের ভিতরে এটি পরতে তিনি অপছন্দ করেন। অথচ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জামানায় মদিনায় মেয়েদের মধ্যে আমারই একমাত্র কামিজ ছিল। মদিনায় যখন কোনো মেয়েকে বিয়ের সাজে সাজাতে যেতাম, তখন আমি কাউকে পাঠিয়ে ঐ কামিজটি চেয়ে নিতাম (সাময়িক ব্যবহারের জন্য)। (বুখারি, হাদিস : ২৪৫২)

নারীরা মাহরাম ১৪ শ্রেণীর পুরুষ ও নারীসদৃশ হিজড়াদের সামনে স্বাভাবিক অঙ্গের সাজসজ্জা প্রদর্শন করতে পারবে। গায়রে মাহরাম পুরুষদের দেখানোর জন্য রূপচর্চা করা যাবে না। এতে রূপচর্চাকারী গোনাহগার হবে। জাহেলি যুগের মতো নারীদের সৌন্দর্য প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করো এবং প্রাচীন জাহেলিয়াতের নারীদের মতো সাজগোজ ও সৌন্দর্য প্রদর্শন করে ঘোরাফেরা করো না।’ (সুরা আহজাব, আয়াত : ৩৩)

রূপচর্চার মূলনীতি:

রূপচর্চার ক্ষেত্রে নারীদের জন্য কিছু মূলনীতি রয়েছে। এগুলো মেনে চলতে নারীদের এবং তাদের অভিভাবকদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

প্রথমত, ইসলামে যে কাজগুলো নিষিদ্ধ, সেগুলো কারো জন্যই করা উচিত নয়। এমনকি স্বামীকে খুশি করার জন্যও নয়। ইবনে উমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য হলো, পছন্দ হোক বা অপছন্দ, সবসময় আমীরের কথা শোনা ও মান্য করা, যতক্ষণ না তাকে আল্লাহর নাফরমানীর নির্দেশ দেওয়া হয়। যদি এমন নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে আর শোনা ও মান্য করা যাবে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৭০৭)

দ্বিতীয়ত, রূপচর্চা করতে গিয়ে নারী পুরুষের রূপ ধারণ করা উচিত নয়। এর ফলে তাকে পুরুষ সাদৃশ্য মনে হতে পারে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, নবী কারিম (সা.) সেই সব পুরুষদের লানত করেছেন যারা নারীর বেশ ধারণ করে এবং সেই সব নারীদেরও যারা পুরুষের বেশ ধারণ করে। (বুখারি, হাদিস : ৫৮৮৫)

তৃতীয়ত, রূপচর্চার ক্ষেত্রে কোনো অমুসলিম বা কথিত নায়িকাদের অনুসরণ করা উচিত নয়। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের অনুসরণ করবে, সে তাদের দলের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৯৮৯)

চতুর্থত, রূপচর্চার জন্য নাপাক বা ক্ষতিকর প্রসাধনী ব্যবহার করা উচিত নয়। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ক্ষতি ও ক্ষতি সাধনের কোনো অনুমতি নেই।’ (দারাকুতনি, হাদিস : ৩০৭৯)

পঞ্চমত, আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা উচিত নয়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া প্লাস্টিক সার্জারি করে শরীর পরিবর্তন করা জায়েজ নয়। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, আল্লাহ লানত করেছেন সেই সমস্ত নারীর প্রতি যারা অন্যের শরীরে উল্কি অঙ্কন করে, নিজ শরীরে উল্কি অঙ্কন করায়, যারা সৌন্দর্যের জন্য ভ্রূ উপড়িয়ে ফেলে ও দাঁতের মাঝে ফাঁক সৃষ্টি করে। এসব নারী আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধন করে। (বুখারি, হাদিস : ৪৫২৫)

এসব বিষয়ে মুসলিম নারীদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

  • ইসলামী জীবন
  • ইসলামের আলো