পরীক্ষা মানেই আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তা। যখন পরীক্ষা আসে, পরীক্ষার্থীরা যেমন চরম আতঙ্কে থাকে, তেমনি তাদের অভিভাবকরাও গভীর দুশ্চিন্তায় থাকেন। আখিরাতের যে পরীক্ষায় আমরা প্রতিদিন জড়িয়ে আছি, তা নিয়ে যদি একটু ভাবতাম, তাহলে আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ই সুখময় হতো। পরীক্ষা একাডেমিক হোক বা জীবনের, পরীক্ষার সময় মুমিনের কিছু করণীয় রয়েছে।
এর মধ্যে একটি হলো আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা। কারণ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।’ (সুরা : তালাক, আয়াত : ৩)
আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে আসবাব ও উপকরণ গ্রহণ না করেই বা পড়ালেখা না করেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য বসে থাকবেন। কারণ আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব তথা উপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন।
তাহলে আসবাব বা উপকরণ গ্রহণ করা জরুরি। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন হজ করতে যেত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় নিয়ে আসত না। আবু মাসউদ বলেন, ইয়েমেনের কিছু লোক হজে যেত কিন্তু পাথেয় আনত না এবং তারা বলত যে আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি। কিন্তু মক্কায় পৌঁছানোর পর তারা ভিক্ষা করতে বাধ্য হতো।
এ কারণে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৭৩০)
দুনিয়ার পরীক্ষায় সফল হতে হলে আল্লাহর ওপর ভরসা রেখে পরীক্ষার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি নিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করা জরুরি। কারণ আল্লাহ অনেক সময় মানুষের পরিশ্রম ও চেষ্টা অনুযায়ী তাকে সফলতা দান করেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর সবার জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।’ (সুরা : আল-আহকাফ, আয়াত : ১৯)
পরীক্ষায় অংশ নিতে বের হওয়ার আগে দুই রাকাত ‘সালাতুল হাজত’ পড়ে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। কারণ রাসুল (সা.) যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখন ‘সালাতুল হাজত’ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ পড়তেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৩১৯)
এটি পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়া প্রয়োজন নয়, বরং সাধারণভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিজের প্রয়োজনগুলো মহান আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা উচিত।
বিসমিল্লাহ বলে পরীক্ষা শুরু করতে হবে। এতে আল্লাহর রহমত পাওয়া যাবে। অনেকেই পরীক্ষার সময় অস্থির হয়ে পড়ে এবং খুব বেশি তাড়াহুড়া করে। এর ফলে অনেক সময় ভুল উত্তরও দিয়ে ফেলে। ইসলাম তাড়াহুড়া পছন্দ করে না, কারণ এটি শয়তানের অভ্যাস।
এছাড়া, পরীক্ষা শুরু হলে ধীরস্থিরভাবে প্রশ্ন বুঝে উত্তর লিখতে হবে। অস্থির হয়ে তাড়াহুড়া করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ধীরস্থিরে কাজ করা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (সুনানে বায়হাকি, হাদিস : ২০৭৬৭)।
পরীক্ষায় সঠিক উত্তর প্রদানে মহান আল্লাহর সাহায্য কামনা করার জন্য মনে মনে দোয়া করা যেতে পারে। যেমন ‘রব্বি জিদনি ইলমা’। যদি কোনো উত্তর মনে না পড়ে, তখন এই দোয়া পড়া যেতে পারে—উচ্চারণ : ‘রব্বিশরহলি সদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিন লিসানি, ইয়াফকাহু কওলি।’ এর অর্থ হলো: ‘সে বলল, হে আমার রব, আমার বুককে প্রশস্ত করুন। এবং আমার কাজকে সহজ করুন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করুন, যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা : ত্বহা, আয়াত : ২৫-২৮)। এই দোয়া মৌখিক পরীক্ষার সময় বেশি বেশি পড়া যেতে পারে।
এছাড়া, মুরব্বিদের মুখে আরেকটি দোয়া শোনা যায়, ‘রব্বি ইয়াসসির, ওয়া লা তুআসসির, ওয়া তাম্মিম আলাইনা বিল খাইর।’ এর অর্থ হলো: হে আমার রব, সহজ করে দিন, কঠিন করবেন না, এবং কল্যাণের সঙ্গে শেষ করার তাওফিক দান করুন।
মহান আল্লাহ সবাইকে পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার তাওফিক দান করুন।