গত জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উত্তাল ছিলো গোটা জুলাই মাস। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন নানা দফা পেরিয়ে রূপ নেয় এক দফার আন্দোলনে। এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা এক দফা কর্মসূচি দমাতে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এছাড়াও আন্দোলনের সময় ইন্টারনেট বন্ধসহ বিভিন্ন ঘটনার স্বাক্ষী এই প্রজন্ম এবং পুরো বাংলাদেশ।
এতকিছুর পরেও ছাত্র-জনতার এক দাবির আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। এতে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী সরকারের পতন হয়। সেই থেকে আওয়ামী সরকারের সময় দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী-এমপি ও প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে থাকেন। তবে সময় যত গড়াচ্ছে ততই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছেন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরা।
এছাড়াও জানা গেছে, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হককে গত (১৩ আগস্ট) রাজধানীর সদরঘাট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ওইদিন নৌ পথে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। এসময় তার সঙ্গে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানকেও গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় এক হকারের মৃত্যুর ঘটনায় হওয়া হত্যা মামলায় গত ১৪ আগস্ট সাবেক আইনমন্ত্রীকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ কার্যালয়ে ১০ দিনের রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
এছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের সময় হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুনে মুচকি হেসেছেন আনিসুল হক। এরপর তিনি সুপ্রিম কোর্টের অবস্থা জানতে চেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে। কারা কারা নতুন করে বিচারক হিসাবে নিয়োগ পেলেন সে বিষয়েও জানতে চান তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। এছাড়াও সূত্রে আরো জানায়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জিজ্ঞাসাবাদের সময় একেবারেই স্বাভাবিক ছিলেন। তিনি তখন পুলিশের কোনো প্রশ্নের উত্তরই দেননি। প্রশ্ন করা হলে তিনি শুধু হাসেন।
এদিকে গত ১৯ জুলাই রিকশাচালক কামাল মিয়া পল্টন এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা করা হয়। সেই মামলায় জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিনের রিমান্ড নেয় পল্টন থানা পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক কোনো তথ্য দিতে পারছেন না। প্রশ্ন করলেই মাথা নিচু করে কাঁদছেন, কেঁপে উঠে কুঁকড়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ৬ বছর ধরে চালানো নিজের মন্ত্রণালয়ের কোনো কাজের দায়-দায়িত্ব নিতেও অস্বীকার জানান তিনি।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় দুই দফার মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। যার নেতৃত্ব দিয়েছেন জুনাইদ আহমেদ পলক এমনটি দাবি ছাত্র-জনতার। তাই আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে জুনাইদ আহমেদ পলকের ওপর ক্ষোভে ফুঁসছিলেন মানুষ। এছাড়াও ইন্টারনেট বন্ধের পর আন্দোলনের সময় অনেক সত্য ঘটনা প্রকাশ করতে পারেনি সাধারণ জনগন। এতেই তার ওপর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এদিকে রিমান্ডে থাকা সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, তিনি চালালেও কোনো কিছু তিনি একা করেনি, সব দোষ দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়ের; হাসিনা ও জয়ের সঙ্গে মিলেই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হতো।