সঙ্গে এক লিটার পানি নিয়ে ৩ দিন ধরে ছাদে ১১ জন

📄🖋: রুবিনা আক্তার
প্রকাশ: ৩ মাস আগে
ছবি: সংগৃহীত

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শিকারপুর গ্রামের সাথে যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বুড়িচং উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ।

‘আমার পরিবার তিন দিন ধরে আটকা পড়ে আছে। সেখানে আমার ভাই ও পরিবারের ১০ জন সদস্য আটকে আছেন। সঙ্গে আছে মাত্র এক লিটার পানি। তাদের তিন দিনেও উদ্ধার করতে পারিনি।’ কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার শিকারপুর গ্রামের আলী আশ্রাফের ছেলে নাজমুল হোসেন এভাবেই তার পরিবারের আটকা পড়ার কথা জানান।

গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছেন জানিয়ে নাজমুল বলেছিলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে তার ভাই মো. লিটন, বাবা-মাসহ ও পরিবারের ১০ সদস্য তাদের তিনতলা বাড়ির ছাদে রয়েছেন। ওই পর্যন্ত পানি ওঠেনি। তবে মোবাইল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।

নাজমুল বলেন, ‘শিকারপুর, যেখানে আমাদের বাড়ি, সেখানে যোগাযোগের ব্যবস্থা একেবারেই নেই বললেই চলে।’

বুড়িচংয়ের বুড়বুড়ি এলাকায় বৃহস্পতিবার রাতে গোমতীর বাঁধ ধসে বন্যার পানি লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে। ওই সময় নাজমুল লোকজনকে উদ্ধার করতে করতে বাড়ি থেকে ছুটে আসেন। কিন্তু তিনি আর ফিরে যেতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘আমি মানুষকে উদ্ধার করছি, কিন্তু আমার পরিবারকে উদ্ধার করতে পারছি না। শিকারপুরের দিকে কোনো নৌকা বা স্পিডবোট যাচ্ছে না। সেদিকে স্রোত হওয়ায় যেতে সমস্যা হচ্ছে। আমি চেষ্টা করছি সেদিকে যেতে।’

বাঁধ ভেঙে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বুড়িচং উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ। আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত এলাকার অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেনি। তাদের মধ্যে অনেকেই বাড়ির ছাদে অবস্থান নিয়েছে। অনেকে গলাসমান পানির মধ্যে বাড়িতেই রয়ে গেছে। তারা বাড়ির মায়ায় পড়ে থাকলেও এখন নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব রয়েছে।

সেখানে নৌকা ও খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গতকাল শনিবার বুড়িচং উপজেলার ভরাসার, ইছাপুরা ও খাড়াতাইয়ায়ও একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খাড়াতাইয়া গ্রামের বাসিন্দা রেহানা বেগম বলেন, তিনি একটি আশ্রয়কেন্দ্রে স্বজনদের নিয়ে অবস্থান করছেন। তিনি জানান, গ্রামের অনেকেই বিভিন্ন ভবনের ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের মধ্যে অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন। তাদের উদ্ধার করতে নৌকার প্রয়োজন হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কুমিল্লা-বুড়িচং সড়কে অনেক সহায়তা পৌঁছেছে। তবে যারা মাইক্রোবাস নিয়ে গেছেন, তাদের ফিরে আসতে হয়েছে। কারণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে হাঁটুপানি জমে গেছে। পানির প্রবল স্রোত রয়েছে। স্বাভাবিকভাবে হাঁটা সম্ভব নয়। ট্রাক্টর ও পিকআপ ভ্যান নিয়ে যারা মূল সড়কে পৌঁছাতে পেরেছেন, তারা ত্রাণ বিতরণ করছেন। পিকআপ ভ্যানে নৌকা নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিরা গ্রাম থেকে লোকজনকে উদ্ধার করতে সক্ষম হচ্ছেন।

  • বন্যা
  • বাংলাদেশ
  • সব খবর