নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চরকিং বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ। এই বিদ্যালয়ের পরিচালক কেরানী হতে প্রমোশন নিয়ে এমপিও নীতিমালা- ভঙ্গ করে প্রধান শিক্ষকের পদবী নিয়েছেন বলে জানান ছাত্র ছাত্রীদের অবিভাবকেরা।
প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন মুল ক্যাম্পাসের বাহিরে জাহাজ মারাতে শাখা খুলে সাধারণ শিক্ষার পাশা পাশি কারিগরী শাখায় ২টি ট্রেড় তথা কম্পিউটার ও ফুড় প্রসেজিং এন্ড প্রিজার বেশন নামক দুটি ট্রেড পরিচালনা করছেন। এই দুটি ট্রেডে নৈশ প্রহরী, ঝাড়ুদার, অফিস সহকারী- নিয়োগে লাখ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে প্রত্যক্ষ দর্শীরা জানান। বিদ্যালয়ের টয়লেটের পানির ট্যাঙ্ক চুরি করে বাসায় স্থাপনেরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, ২০১৭ সালে এই প্রধান শিক্ষক জাহাজ মারাতে শাখা খুলে তিন বছর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার পর এটি বন্ধ করে শিক্ষাও সমাজের ক্ষতি সাধন করেছেন। এতে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী শিক্ষা কার্যক্রম থেকে ঝরে পড়েছে। উপবৃতি বঞ্চিত ও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হয়েছে শিক্ষার্থীরা।
এলাকায় খোজ নিয়ে দেখা গেছে যে, জনাব জহির উদ্দিন ২০২২ সালে আরাবো বন্ধ শাখা চালু করে সাধারন শিক্ষা কারিগরীর ২টি ট্রেড় চালু করেন। ২য় পৃষ্ঠা ভর্তি সংক্রান্ত কোন প্রচারনাই তিনি করেন নাই, কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের বিধি লঙ্গন করে ট্রেড় দুটিও বন্ধের পর্যায়ে। হাজিরা খাতা পর্যালোচলা করে দেখা গেছে যে, উক্ত শাখায় প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন ২ বছরে উপস্থিত ছিলেন মাত্র ৯ দিন আর সহকারী প্রধান শিক্ষকের কর্ম দিবস ও শূন্য।
গত ২ বছর পরিচালনা শেষে আবারো বিদ্যালয় বন্ধের নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন। এতে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, বিদ্যালয় চত্ত্বরে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা মানব বন্ধন, প্রতিবাদসভা ঝাড়ু মিছিল করেন। তারা প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন, সহকারী শিক্ষক ফখরুল ইসলাম, প্রবীর চন্দ্র মজুমদার ও আহসান উল্যাহ এর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবী পেশ করেন, এবং সামাজিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের মুল হোতা এই ৪ জনের শাস্তিদাবী করেন। ৬ষ্ঠ শ্রেনি সহ সকল শ্রেনিতে স্বাভাবিক কার্যক্রম সচল রাখার দাবী জানান।
নিয়োগ পর্যালোচনায় দেখা গেছে জনাব জহির উদ্দিন এমপিও নীতিমালা উপেক্ষা করে শিক্ষাজীবনে ২টি তৃতীয় শ্রেনী সনদ থাকা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষকের চাকুরী নিয়ে কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেন রাষ্ট্রের। এই প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিনকে চাকরীচ্যুত করার সকল আইনি ব্যবস্থা গ্রহনের ও তাগিদ দেন ভুক্তভোগীরা।
রাজনৈতিক একাধিক সুত্র থেকে জানা গেছে, এই প্রথান শিক্ষক একজন রাজনৈতিক চাটুকার। তিনি কেরানী থেকে প্রধান শিক্ষক হওয়া সবই তার রাজনৈতিক ফসল। বিগত ৩টি জাতীয় নির্বাচনে প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আদিপত্য বিস্তার, ৭৫% ভুয়া ভোট সংগ্রহ সহ নানা কর্ম কান্ডের মাধ্যমে প্রভাবশালী মনোনীত নেতাদের জিতিয়ে অর্থ উপার্জন ও করেছেন। জহির উদ্দিন হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর একনিষ্ঠ লোক বলেও জানা যায়।
গত ১৭ বছরের আপত্তিকর কর্মকাণ্ডের কাল হিসাবে জাহাজ মারা ক্যাম্পাস নিজের জন্য অনিরাপদ মনে করে সামাজিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের চিন্তা করছেন। গত জুলাই- আগষ্ট বিপ্লবে ছাত্র জনতার আন্দোলনে তাকে উপহাস করতেও দেখা গেছে। ভেজাল জমি ক্রয়-বিক্রয় অনুমোদনহীন সমিতি সৃষ্টি করে চড়া সুদে বিনিয়োগ করে মানুষের রক্ত চুষে খাচ্ছেন জহির উদ্দিন, বহু লোকের সাথে চেক ব্যবসা করে তিনি এখন কোটিপতি।
এই বিষয়ে সহকারী শিক্ষক ফখরুল ইসলাম কাজল ( ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) বলেন, জাহাজমারা ও চরকিং স্কুলের দুইটি শাখা রয়েছে, তবে শিক্ষার্থী না থাকাতে প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে জাহাজ মারা ক্যাম্পাস এবং শিক্ষকের ও অভাব রয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বললে তিনি সব কিছুই অস্বীকার করেন।
এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জহির উদ্দিন বলেন, আমি অসুস্থ, বর্তমানে চট্টগ্রামে অবস্থান করছি, তবে আপনি যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলেছেন সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করতেছে।
এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে জায়েদ আল হাসান বলেন, এই বিষয়ে আমার কাছে কোন অভিযোগ আসে নি, কেউ যদি লিখিত অভিযোগ করে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নিবো।