নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় একমাত্র চলাচলের মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। আর এই নৌপথেই দৈনিক শত শত মানুষ চলাচল করে। তাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হলো সি-ট্রাক, ট্রলার ও স্পিডবোট। কিন্তু অতিরিক্ত ফিটনেস বিহীন ট্রলার ও স্পিড বোটের কারণে বন্ধ হওয়ার পথে সি-ট্রাক। সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষ দাবি করে, অতিরিক্ত ফিটনেস বিহীন ট্রলার ও স্পিড বোটের কারণে যাত্রীসংকট থাকায় দুই বারের জায়গায় এখন একবার আপ-ডাউন করছে, অচিরেই তাও বন্ধ হতে পারে সি-ট্রাক।
গত ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সি-ট্রাকটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের শুরুর দিক থেকে এই পর্যন্ত চালু রয়েছে। আগে প্রতিদিন চেয়ারম্যান ঘাট টু নলচিরা আফাজিয়া ঘাটে একবার আপ-ডাউন করলেও ৫ আগস্টের পর হাতিয়ার মানুষের কথা বিবেচনা করে সকাল-বিকাল আপ-ডাউন করে আসছে সি-ট্রাকটি। যা বর্তমানে দুইবারের জায়গায় এক আপ – ডাউন করছে।
কিন্তু যাত্রীসংকট থাকায় অচিরেই বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষ। সি-ট্রাক বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষ দায়ী করছে ঘাটের অব্যবস্থাপনাকে। পাল্লা দিয়ে চলছে ফিটনেসবিহীন স্পিডবোট ও ট্রলার! মানুষের মধ্যেও নেই জীবনের মায়া ও সচেতনতা!
তিন – চার মাস আগেও এই রুটে স্পিডবোটের সংখ্যা ছিল ২১, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২। তা ছাড়া সি-ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছ ধরার নৌকাগুলোও যাত্রী পারাপারে ব্যস্ত।
আর এই ফিটনেসবিহীন স্পিডবোট ও মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন একেকজন প্রভাবশালী নেতা। কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার জন্য হাতিয়ার আট লাখ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন অথচ হাতিয়ার মানুষ এখনো স্বাধীন নয়, ছিল না কখনো।
সি-ট্রাক ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ট্রলার কিংবা স্পিডবোট না চলার কথা থাকলেও তা মানছেন না কেউই, যেন নিজের মতো করেই চালাচ্ছেন ট্রলার কিংবা স্পিডবোট।
এই বিষয়ে গত ১১ নভেম্বর ২০২৪ বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রামের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) মো: কামরুজ্জামান হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত নোটিশ প্রধান করেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, হাতিয়া-চেয়ারম্যানঘাট নৌরুটে রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস বিহীন অবৈধ ভাবে চলাচল কারী স্পীডবোট বন্ধের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য।
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে হাতিয়া-চেয়ারম্যানঘাট নৌপথে চেয়ারম্যানঘাট হতে নলচিরা, হাতিয়ায় অবৈধভাবে ফিটনেস বিহীন স্পীডবোট চলাচল করছে। এ সকল স্পীডবোটের অধিকাংশের নৌপরিবহন অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন এবং সার্ভে সনদসহ বিআইডব্লিউটিএ’র রুটপারমিট ও সময়সূচী নেই। অনুমোদন বিহীন এসকল স্পীডবোট চলাচল যাত্রী পরিবহনে মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি অধিক মুনাফার জন্য ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে আইন ও বিধি লঙ্গন করে স্পীডবোট পরিচালনা করছে ফলে, যে কোন সময় মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
নোটিশে আরো বলা হয়, যাত্রী সাধারনের সুষ্ঠু ও নিরাপদ নৌ-চলাচল সুনিশ্চিত করার নিমিত্ত হাতিয়া- চেয়ারম্যান ঘাট নৌপথে চেয়ারম্যানঘাট হতে নলচিরা, হাতিয়ায় ফিটনেস বিহীন অবৈধভাবে চলাচলকারী স্পীডবোট সমূহের চলাচল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণার্থে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।
এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে জায়েদ আল হাসান বলেন, আমরা এখনো অফিসিয়ালি নোটিশ পাইনি, আমরা নোটিশ পেলে অভিযান পরিচালনা করবো।
বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রামের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) মো: কামরুজ্জামান বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই কেবল সম্ভব সব অনিয়ম রোধ করে ঘাটের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এসব অনিয়ম রোধ করতে পারলে সি-ট্রাক পর্যাপ্ত যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়তে পারবে এবং হাতিয়ার মানুষও নিরাপদ যাতায়াতের নিশ্চয়তা পাবে।