পোশাককর্মী মো. রুবেলকে হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’ সভাপতি ফারুক আহমেদকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
আইনজীবী মো. রাফিনুর রহমানের পক্ষে শনিবার সংশ্লিষ্টদের ই-মেইলে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সজিব মাহমুদ আলম।
রবিবার (২৫ আগস্ট) রেজিস্ট্রি ডাকে নোটিশটি পাঠানো হবে বলে জানান তিনি। বিসিবি সভাপতির পাশাপাশি বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দিন চৌধুরীকেও এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
দেশে ফেরানোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি জাতীয় ক্রিকেট দলের (পুরুষ) অখণ্ডতা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘অংশগ্রহণকারী’ হিসেবে ক্রিকেটের সব ধরনের সংস্করণ থেকে সাকিব আল হাসানকে সাময়িক বরখাস্তের অনুরোধ করা হয়েছে নোটিশে।
আইনজীবী সজিব মাহমুদ আলম বলেন, ‘অতীতে সাকিব আল হাসানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। বিসিব সবসময়ই তা পাশ কাটিয়ে গেছে। এখন তার বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা হয়েছে।
ফৌজদারী মামলার একজন আসামি হিসেবে সে ক্রিকেটে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন না। কারণ ক্রিকেটের সাথে দেশের ভাবমূর্তি জড়িত। তাই ক্রিকেটের সব ধরনের সংস্করণে তার অংশগ্রহণ স্থগিত করতে এবং তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে।’
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের (পুরুষ) সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন।
কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল গুলিবিদ্ধ হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত রুবেলের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গত ২২ আগস্ট আদাবর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১৫৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করেছেন বাদী।
এ মামলার ২৮ নম্বর আসামি ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান।
নোটিশে বলা হয়েছে, দেশের নাগরিকদের হৃদয়ে দেশের ক্রিকেট ও বিসিবি একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা আমাদের দেশে আইডল। তাদের অনেকেরই বিশাল ফ্যান-ফলোয়ার রয়েছে। সম্প্রতি দেশের তরুণ প্রজন্ম রক্ত ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশে অভূতপূর্ব এক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)-এও সে পরিবর্তনের হওয়া বইছে।’
সাকিব আল হাসানের বিষয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) ও বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)’র দুর্নীতিবিরোধী কোড (অ্যান্টি করাপশন কোড ফর পার্টিসিপেন্টস -এসিসিপি) অনুসারে সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একজন অংশগ্রহণকারী। বিসিবির দায়িত্ব হচ্ছে দেশের ক্রিকেটের অখণ্ডতা রক্ষা করা। ফলে বিসিবি ও আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কোডের ৪.৭.১ ধারা অনুসারে একজন ‘অংশগ্রহণকারী’ হিসেবে ক্রিকেটের সব ধরনের সংস্করণ থেকে সাকিব আল হাসানকে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করতে পারে বিসিবি।’
নোটিশে আরো বলা হয়েছে, ‘পতিত সরকারের অংশ হিসেবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দমন-পীড়ন ও হত্যায় তাঁর দায় আছে। অতীতে তার বিরুদ্ধে বহুবার অনৈতিক ও বেআইনি কাজের অভিযোগ উঠেছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এসেছে। বিসিবি বরাবরই এসব অভিযোগের বিষয়ে উদসীন থেকেছে। ফলে অপরাধের গুরুত্ব (রুবেল হত্যা) বিবেচনায় এবং দেশের ক্রিকেটের সুরক্ষায় তাকে অবিলম্বে সাময়িক বরখাস্ত করা হোক। একই সঙ্গে ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হোক।