নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় একমাত্র চলাচলের মাধ্যম হচ্ছে নৌপথ। আর এই নৌপথেই দৈনিক শত শত মানুষ চলাচল করে। তাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হলো সি-ট্রাক, ট্রলার ও স্পিডবোট। কিন্তু অতিরিক্ত ফিটনেস বিহীন ট্রলার ও স্পিডবোটের কারণে বন্ধ হওয়ার পথে সি-ট্রাক। সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষ দাবি করে, অতিরিক্ত ফিটনেস বিহীন ট্রলার ও স্পিডবোটের কারণে যাত্রীসংকট থাকায় দুই বারের জায়গায় এখন একবার আপ-ডাউন করছে, অচিরেই তাও বন্ধ হতে পারে সি-ট্রাক।
জানা যায়, হাতিয়া চেয়ারম্যান ঘাট ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে পরিচালনার জন্য গত ২৮ জুলাই ২৪ তারিখে গোলাম মাওলা কাজল ইজারা কার্যাদেশ প্রাপ্ত হয়। পাশাপাশি, হাতিয়া দ্বীপের নলচিরা ঘাট গত ২৮ জুলাই ২৪ তারিখে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক জনাব গোলাম মাওলা ইজারা প্রাপ্ত হয়। সরকার পতনের আগেও ভালোভাবে চলে আসলেও ৫ আগস্টের পরে সি- ট্রাক বন্ধ করে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে কুচক্রী মহল।
আরো জানা যায় ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর থেকে সি-ট্রাকটি ২০২৩ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের শুরুর দিক থেকে এই পর্যন্ত চালু রয়েছে। আগে প্রতিদিন চেয়ারম্যান ঘাট টু নলচিরা আফাজিয়া ঘাটে একবার আপ-ডাউন করলেও ৫ আগস্টের পর হাতিয়ার মানুষের কথা বিবেচনা করে সকাল-বিকাল আপ-ডাউন করে আসছে সি-ট্রাকটি। যা বর্তমানে দুইবারের জায়গায় এক আপ – ডাউন করছে যাত্রী সংকটে।
১৭ ডিসেম্বর ২৪ হাতিয়ায় সরকারি সীট্রাকে যাত্রী উঠতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার সকালে চেয়ারম্যান ঘাট থেকে ছেড়ে আসার সময় কিছু লোক সিঁড়ির কাছে দাঁড়িয়ে বাধা দেন তারা। এসময় তারা যাত্রীদের সাথে অশোভন আচরণ করতে দেখা যায়। এইধরনের একটি ভিডিও রিপোর্টারের কাছে এসেছে।
স্থানীয়রা জানান, চেয়ারম্যান ঘাটের একদল লোক সিন্ডিকেট করে ট্রলারে যাত্রীদের বাধ্য করতে এই বাধা দেওয়া। তাদেরকে সহযোগিতা করছে বিএনপির কয়েকজন নেতা। বর্তমানে চেয়ারম্যান ঘাটে চাঁদা দাবি করে কতিপয় লোক জামশেদ জেমি, জুয়েল ডাক্তার, ইমাম হাসান, জামাল, দোলন, কাঞ্চন, আনোয়ার এবং হাতিয়া নলচিরা ঘাটে ইরাক, রহমত, রিয়াজ ও রুবেল
তারা ইজারাদার কে ঘাট পরিচালনায় বাধা দিচ্ছে। ১৩০ থেকে ১৫০ জন যাত্রীর বেশি তারা সি- ট্রাকে উঠতে দিবে না। তারা প্রতিনিয়ত চাঁদা দাবি করছে করতেছে বলে জানায় সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি যাত্রী সংকটে যেন সীট্রাক চলাচল বন্ধ হয়ে না যায়। এজন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সীট্রাক ছাড়ার আগে অন্য ট্রলার কিংবা স্পিডবোর্ডে যাত্রী পারাপার বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই আদেশ কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আজ প্রকাশ্যে সীট্রকে যাত্রী উড়তে বাধা দেওয়া হলো। কিন্তু যাত্রীসংকট থাকায় অচিরেই বন্ধ হতে পারে বলে জানিয়েছে সি-ট্রাক কর্তৃপক্ষ। সি-ট্রাক বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে কর্তৃপক্ষ দায়ী করছে ঘাটের অব্যবস্থাপনাকে। পাল্লা দিয়ে চলছে ফিটনেসবিহীন স্পিডবোট ও ট্রলার! মানুষের মধ্যেও নেই জীবনের মায়া ও সচেতনতা!
গত তিন – চার মাস আগেও এই রুটে স্পিডবোটের সংখ্যা ছিল ২১, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬২। তা ছাড়া সি-ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাছ ধরার নৌকাগুলোও যাত্রী পারাপারে ব্যস্ত। আর এই ফিটনেসবিহীন স্পিডবোট ও মাছ ধরার ট্রলারগুলো নিয়ন্ত্রণ করছেন একেকজন প্রভাবশালী নেতা। কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার জন্য হাতিয়ার আট লাখ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাংলাদেশ স্বাধীন অথচ হাতিয়ার মানুষ এখনো স্বাধীন নয়, ছিল না কখনো। সি-ট্রাক ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে পর্যন্ত ট্রলার কিংবা স্পিডবোট না চলার কথা থাকলেও তা মানছেন না কেউই, যেন নিজের মতো করেই চালাচ্ছেন ট্রলার কিংবা স্পিডবোট।
এই বিষয়ে গত ১১ নভেম্বর ২০২৪ বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রামের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) মো: কামরুজ্জামান হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত নোটিশ প্রধান করেন।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়, হাতিয়া-চেয়ারম্যানঘাট নৌরুটে রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস বিহীন অবৈধ ভাবে চলাচল কারী স্পীডবোট বন্ধের জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য।
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে হাতিয়া-চেয়ারম্যানঘাট নৌপথে চেয়ারম্যানঘাট হতে নলচিরা, হাতিয়ায় অবৈধভাবে ফিটনেস বিহীন স্পীডবোট চলাচল করছে। এ সকল স্পীডবোটের অধিকাংশের নৌপরিবহন অধিদপ্তরের রেজিস্ট্রেশন এবং সার্ভে সনদসহ বিআই ডব্লিউটিএ’র রুটপারমিট ও সময়সূচী নেই। অনুমোদন বিহীন এসকল স্পীডবোট চলাচল যাত্রী পরিবহনে মারাত্বক ঝুঁকিপূর্ণ। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি অধিক মুনাফার জন্য ধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে আইন ও বিধি লঙ্গন করে স্পীডবোট পরিচালনা করছে ফলে, যে কোন সময় মারাত্বক দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
নোটিশে আরো বলা হয়, যাত্রী সাধারনের সুষ্ঠু ও নিরাপদ নৌ-চলাচল সুনিশ্চিত করার নিমিত্ত হাতিয়া- চেয়ারম্যান ঘাট নৌপথে চেয়ারম্যানঘাট হতে নলচিরা, হাতিয়ায় ফিটনেস বিহীন অবৈধভাবে চলাচলকারী স্পীডবোট সমূহের চলাচল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণার্থে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।
এই বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইবনে জায়েদ আল হাসান বলেন, আমাকে এই বিষয়ে সি- ট্রাক মাস্টার আফজাল ফোন দিয়ে অভিযোগ দিয়েছে, আমি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। কোন আইনি পদক্ষেপ নিবেন কিনা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অভিযোগের উপর ডিফেন্ড করে কি ধরনের ব্যবস্থা নিবো।
বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রামের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপপরিচালক ( ভারপ্রাপ্ত) মো: কামরুজ্জামান বলেন, প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই কেবল সম্ভব সব অনিয়ম রোধ করে ঘাটের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এসব অনিয়ম রোধ করতে পারলে সি-ট্রাক পর্যাপ্ত যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়তে পারবে এবং হাতিয়ার মানুষও নিরাপদ যাতায়াতের নিশ্চয়তা পাবে। না হয় অচিরেই বন্ধ হয়ে যাবে হাতিয়ার সি- ট্রাক।