কপালে বরাবর গুলি ঢুকে কানের নিচদিয়ে বড় গর্ত করে বেরিয়ে গিয়েছিল মুগ্ধর

📄🖋: নিউজ ডেস্ক
প্রকাশ: ৪ মাস আগে
মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ

গত (১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার )সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে মাথায় কপাল বরাবর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। ফেসবুকে নিহত মুগ্ধর ৩৮ সেকেন্ডের একটা ভিডিও শেয়ার করেন তার ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। তাতে দেখা যায়, মৃত্যুর আগে শেষ মিছিলেও মুগ্ধ আন্দোলনকারীদের হাতে ওয়াটারকেস থেকে পানি তুলে দিচ্ছেন। সেখানে তাকে বারবার বলতে শোনা যায়, ‌‘এই পানি লাগবে পানি’। এ সময় বুকে ঝুলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয়পত্র।

স্নিগ্ধ ফেসবুকে লেখেন, ‘আমার ভাই মুগ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়। তার কপালে গুলি ছোট গর্ত করে ডান কানের নিচে বড় গর্ত করে বেরিয়ে গিয়েছিল। নিহত হওয়ার আগেও মুগ্ধ বিস্কুট ও পানি দিয়ে আন্দোলনে সহযোগিতা করছিল। সে সবসময় পলিটিক্স এর বিপক্ষে থাকলেও মানুষের অধিকারের পক্ষে ছিল।সে  বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিল।’

‘মাথায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার সময়ও মুগ্ধ উত্তরার আজমপুরে রোড ডিভাইডারের মাঝামাঝিতে হাতে ওয়াটারকেসটি ধরে রেখেছিল। তার বন্ধু আশিক তাকে তাৎক্ষণিক সেখানকার নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যায়, এ সময় সেখানে অনেক পুলিশ ভিড় করেছিল। আমার ভাই কখনো পুলিশের বিপক্ষে ছিল না, সে বলতো তারা কেবল আদেশ অনুসরণ করছে। তবে তাদের ব্যক্তিগত নৈতিকতা অনুসরণ করা উচিত এবং কোনো অনৈতিক আদেশ অনুসরণ করা উচিত নয়।’

 

মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ

মুগ্ধ গুলিতে নিহত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে বন্ধু নাইমুর রহমান আশিক বলেন, ‘এক পর্যায়ে আমরা ইষ্টি কুটুমের মুখোমুখি হয়ে রোড ডিভাইডারের ওপর বসলাম একটু বিশ্রামের জন্য। প্রথমে জাকির এরপর মুগ্ধ আর সবশেষে আমি। তখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গুলি করে নাই! শুধু টিয়ার শেল, স্প্রিন্টার আর রাবার বুলেটেই সীমাবদ্ধ ছিলো! হঠাৎ সবাই আমির কমপ্লেক্স আর রাজউক কমার্শিয়ালের দিক থেকে দৌড়ায় আসতেসে! ২/৩ সেকেন্ড পর মুগ্ধর পায়ের ওপরে হাত রেখে বললাম, চল দৌড় দেই। আমার বন্ধু শেষবারের মতো আমাকে বলল চল। জাকির উঠে দৌড় দিল আগে তারপর আমিও উঠে দৌড় দিলাম ৩ থেকে ৪ কদম যাওয়ার পর আমার সামনেই জাকিরকে দেখতেছি দোড়াইতেছে কিন্তু আমার পাশে মুগ্ধ নাই! পেছন ঘুরে তাকাতেই দেখি আমার বন্ধু ওই বসা অবস্থা থেকেই মাটিতে পড়ছে, চোখ ২ টা বড় করে আমার দিকে তাকায় আছে, হাতে সেই অবশিষ্ট বিস্কুট আর পানির বোতলের পলিথিন, কপালে গুলির স্পষ্ট চিহ্ন।

‘আমি চিৎকার করলাম, ‘জাকির মুগ্ধ গুলি খাইসে’। সামনের দিকে একবার তাকাইয়া দেখলাম অসংখ্য পুলিশ অস্ত্র হাতে এদিকে আসতেছে! কেমন জানি গোলমাল লাইগা গেল! মাথা কাজ করতেছে না! শরীর নিস্তেজ হয়ে যাইতেসিল! একবার ভাবলাম মুগ্ধর পর্যন্ত যাওয়ার আগেই আমাকেও গুলি করবে! তবুও আমি দৌঁড়ায়ে মুগ্ধর কাছে গিয়ে ওরে ধইরা তোলার চেষ্টা করলাম পারতেছি না একা, পাশেই একজন সাহস করে আসল চেহারা মনে নাই! দুইজনে মিলে কোলে তুললাম মুগ্ধকে! পরক্ষণেই বেশ কয়েকজন মিলে ধরল! আমি রিক্সায় আবারও আগের মতোই কোলে নিয়ে হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি আর মুগ্ধর কপালে চাপ দিয়ে ধরে আছি যাতে রক্ত না বের হয়!’

আশিক লেখেন, ‘আমার কাছে সবকিছু কেমন স্লো মোশন মনে হচ্ছিল! কিছুক্ষণ পর ঝাপসা চোখে দেখলাম মুগ্ধর আইডি কার্ড হাতে ডাক্তার আমাকে বলতেছে, আপনার কি হয়, বললাম আমার ভাই! বলল আপনার কোথায় লাগছে? পানি খান, বেডে শুয়ে পড়েন! বললাম আমার কিছুই হয় নাই! ওর কি হইছে, বাইচা আছে? আমাকে বলল পালস খুঁজে পাচ্ছি না আপনি একটু রিল্যাক্স হয়ে বাসায় ফোন দেন! তখনও ক্লিয়ারলি কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না! আমি স্নিগ্ধকে কল করলাম সাথে সাথে! বললাম মুগ্ধ গুলি খাইসে তাড়াতাড়ি ক্রিসেন্টে আয় ভাই! স্নিগ্ধ আসল, দেখল! ডাক্তার জানাইলো পালস পায় না! স্নিগ্ধ আমাকে ধরে কানতেসে আর অসহায়ের মতো ডাক্তারকে বলতেসে ভাই প্লিজ, প্লিজ ভাই আরেকবার দেখেন না!

  • কোটা
  • ছাত্র আন্দোলন