পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে একীভূত করে অভিন্ন সার্ভিস কোড বাস্তবায়ন এবং চুক্তিভিত্তিক ও অনিয়মিতদের চাকরি নিয়মিত করার দুই দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য গত শনিবার (২৪ আগস্ট) আন্দোলনরত ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। আজ সেই আলটিমেটামের সময়সীমা শেষ হচ্ছে।
গ্রামাঞ্চলের ৮০ শতাংশ এলাকার ৩ কোটি ৬০ লাখের বেশি গ্রাহককে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, যা বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ। প্রশ্ন উঠেছে, আলটিমেটাম অনুযায়ী যদি দাবি-দাওয়া পূরণ না হয়, তবে কি ঘটবে?
তথ্য সংগ্রহ করে জানা গেছে, দাবি আদায় না হলে সমিতির কর্মচারীরা পূর্ণ কর্মবিরতিতে যেতে পারেন। এর ফলে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ বিভ্রাটের (ব্ল্যাকআউট) সম্মুখীন হতে পারে।
এ বিষয়ে কথা হয় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনের সমন্বয়ক প্রকৌশলী রাজন কুমার দাসের সঙ্গে। তিনি জানান, আমাদের যে দুই দফা দাবি রয়েছে, তা সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত ও ন্যায্য। দাবি নিয়ে আমরা বেশ কয়েকবার মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি, কিন্তু এখনও কোনো সঠিক সমাধান পাইনি। গত ৮ আগস্ট পল্লী বিদ্যুৎ, বিদ্যুৎ বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও তা অফিস অর্ডার আকারে প্রকাশ করা হয়নি। আমাদের মনে হচ্ছে, পল্লী বিদ্যুৎ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।
রাজন কুমার দাস আরও বলেন, এবার আমরা ৭২ ঘণ্টার একটি আলটিমেটাম দিয়েছি। যদি এর মধ্যে সুষ্ঠু সমাধান না আসে, তাহলে আমরা ঘোষণা অনুযায়ী গণছুটিতে যাব। ইতোমধ্যে সমিতির ৪০ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা (মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ৪৫ হাজারের কাছাকাছি) ছুটির আবেদন করেছেন। যদি দাবি না মানা হয় তাহলে এসব কর্মকর্তা-কর্মচারী ছুটিতে গেলে দেশজুড়ে বিদ্যুতের ব্ল্যাকআউট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
‘কিন্তু আমরা আসলে চাই না এমন কিছু ঘটুক বা গ্রাহকরা ভোগান্তিতে পড়ুক। আমরা চাই, বিদ্যুৎ উপদেষ্টা ফাওজুল করিম খান, পল্লী বিদ্যুৎ ও বিদ্যুৎ বিভাগ মিলে আমাদের একটি কার্যকর সমাধান দিক।’
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলনের সমন্বয়ক জানান, ইতোমধ্যে তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করছেন। পল্লী বিদ্যুতের চেয়ারম্যান বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে অবস্থান করছেন। শিগগিরই হয়ত কোনো সমাধান আসতে পারে।
গত শনিবার এক বার্তায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, তাদের ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী সপ্তাহের সাত দিন রোদ, ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে দেশের ৮০ শতাংশ অঞ্চলের প্রায় ১৪ কোটি মানুষকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের দ্বৈতশাসন, বৈষম্য ও নিপীড়ন থেকে মুক্তির জন্য আরইবি-পবিস একীভূতকরণ এবং অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়নসহ সব অনিয়মিত/চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে তারা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সচল রেখে এবং গ্রাহক সেবা চালু রেখে সারা দেশে গত ৫ মে থেকে টানা পাঁচদিন কর্মবিরতি পালন করা হয়, যার ফলস্বরূপ বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়। এরপর বিদ্যুৎ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর স্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়।
বার্তায় আরও বলা হয়, সন্তোষজনক ফলাফল না আসায় পুনরায় ১ জুলাই থেকে টানা ১০ দিন কর্মবিরতির পর বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব, তিনজন অতিরিক্ত সচিব, আরইবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতিতে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্মের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক আরইবি-পবিস একীভূতকরণ/রিফর্ম এখন সময়ের দাবি হিসেবে উল্লেখ করা হয় এবং গত ১ আগস্ট আরইবি, সমিতি এবং মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে ৯ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই তারিখে আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় সমিতির দুজন জিএম এবং চারজন ডিজিএমকে শাস্তিমূলক বদলির দপ্তরাদেশ করে আরইবি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রস্তুতির খবর পেয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ গত ২২ আগস্ট পূর্বে গঠিত কমিটির সভা আয়োজন করে। ওই সভায় পূর্ব নোটিশ ছাড়াই আরইবির সব প্রতিনিধি অনুপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ কার্যত নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ফলে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দেয় এবং তারা আরইবির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে সমিতি থেকে সকল তথ্য সরবরাহ বন্ধ করে এবং আরইবির সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়।
আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য নিরসনে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব ঘোষিত দুই দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্যথায়, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ন্যায্য দাবি প্রতিহত করে কর্মপরিবেশ বিনষ্টের অপচেষ্টায় লিপ্ত কিছু উচ্ছৃঙ্খল, দুষ্কৃতকারী ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আরইবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূর করতে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পূর্ব ঘোষিত দুই দফা দাবি বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। পাশাপাশি, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ন্যায্য দাবি প্রতিহত করে কর্মপরিবেশ বিনষ্টের চেষ্টা চালানো কিছু উচ্ছৃঙ্খল, দুষ্কৃতকারী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদয় হস্তক্ষেপ এবং ছাত্র-জনতার সহযোগিতা কামনা করছি।