ইনজুরির কারণে ওমান জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলতে পারেননি হাজীগঞ্জের তাসকিন আহমেদ রিয়াদ

📄🖋: ক্রীড়া - ডেস্ক
প্রকাশ: ৫ মাস আগে
ছবি : সংগৃহীত

ক্রীড়া জীবন:

তাসকিন আহমেদ রিয়াদ : বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেট দিয়ে তার ক্রিকেট যাত্রা শুরু করেন এবং ২০১৪ সালে বয়স ভিত্তি ঢাকা মেট্রোর হয়ে খেলেন। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের একজন তৃতীয় শ্রেণীর ক্রিকেটার। বর্তমানে তিনি ওমান ক্রিকেট বোর্ডের সদস্য। তিনি একজন ডানহাতি ফাস্ট বোলার।
তাসকিন-রিয়াদ, ওমান ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা হিসেবে উদ্ভাসিত হচ্ছেন। তার ক্রিকেট জীবনের শুরু থেকে একাধিক সাফল্যের ধারা অব্যাহত রেখেছেন। তরুণ এই খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত জীবন ও ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা তাকে আসন্ন সময়ে বড় মাপের ক্রিকেটার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সম্ভাবনা ব্যক্ত করছে।
তাসকিনের ক্রিকেট জীবনের সূচনা হয়েছিল অল্প বয়সে। খেলাটির প্রতি তার গভীর আগ্রহ ও কঠোর পরিশ্রম তাকে দ্রুতই সবার নজরে নিয়ে আসে। ওমান জাতীয় লীগের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে তিনি নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ পান, যা তিনি পুরোপুরি কাজে লাগান।
ব্যক্তিগত জীবনে তাসকিন অত্যন্ত সংযত ও নিবেদিত একজন খেলোয়াড়। পরিবার ও বন্ধুবান্ধবের সমর্থন তাকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে তোলে। তার ক্রিকেট দক্ষতা ও প্রাকৃতিক প্রতিভা তাকে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে উজ্জ্বলভাবে তুলে ধরেছে।
তাসকিন-রিয়াদের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ওমান ক্রিকেটের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তার পারফরম্যান্স ও ডেডিকেশন ভবিষ্যতে আরও বড় মাপের সাফল্য বয়ে আনবে বলে আশা করা যায়। ওমান ক্রিকেটের এই উদীয়মান খেলোয়াড় জাতীয় লীগে সবার নজর কেড়েছেন।
বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করা তাসকিন শৈশব থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানীয় ও ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় তার সাফল্যের পরে, তাসকিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।

Taskin Ahmed Riyad

প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা:
তাসকিন আহমেদ রিয়াদ, ওমান ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা, ১৯৯১ সালের ২নভেম্বর চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা পেশাগত কারণে ওমানে অস্থায়ী বাসিন্দা হয়ে থাকেন, সেই সুবাদে তার সপরিবার ওমানে চলে যান। ছোটবেলা থেকেই তাসকিনের মধ্যে ক্রিকেটের প্রতি একটি গভীর আগ্রহ দেখা যায়। তার প্রথম ক্রিকেট ব্যাট উপহার পেয়েছিলেন তার বাবার কাছ থেকে, যা তার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল।
তাসকিন-রিয়াদের শিক্ষা: তিনি হাজিগঞ্জ থানার পিরোজপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন। শিক্ষার পাশাপাশি তিনি সবসময় ক্রিকেটের প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তার জেলায় বিভিন্ন টুর্নামেন্ট এবং স্থানীয় ক্লাব ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করে তিনি তার দক্ষতা ও প্রতিভা প্রদর্শন করতে সক্ষম হন।
তাসকিন-রিয়াদের বাবা-মা তার ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ দেখে অত্যন্ত প্রেরণা যুগিয়েছিলেন। তারা সবসময় তাকে উৎসাহিত করতেন এবং তার ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতেন।
তাসকিন-রিয়াদের প্রাথমিক জীবনের এই সময়গুলোই তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ভিত্তি স্থাপন করে। স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি ক্রিকেট কোচিংও নিয়মিত চালিয়ে যেতেন। তার প্রাথমিক কোচরা সবসময়ই তার মধ্যে একটি বিশেষ প্রতিভা দেখতে পেতেন এবং তাকে আরও উন্নতি করতে উৎসাহিত করতেন। ছোটবেলা থেকেই তাসকিন-রিয়াদের মধ্যে ছিল এক দৃঢ় সংকল্প এবং কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা, যা তাকে সাফল্যের পথে নিয়ে এসেছে।

ক্রিকেটে প্রবেশ:
তাসকিন-রিয়াদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিল অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং এবং অনুপ্রেরণাদায়ক। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল তার। ক্রিকেট মাঠের প্রান্তে দাঁড়িয়ে খেলা দেখার সময় থেকেই তার স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হওয়ার। তবে এই স্বপ্ন পূরণের পথে তাকে অনেক বাঁধা পেরোতে হয়েছে।
তাসকিন-রিয়াদের ক্রিকেটে প্রবেশের জন্য প্রথমে তার মা তাকে সহযোগিতা করে। যেমন “বেশ কয়েক মাস ধরে তার মাকে বলতে থাকেন কিছু টাকা দেওয়ার জন্য তিনি ঢাকাতে যাবে এবং সেখানে একটি ক্রিকেট একাডেমিতে ভর্তি হবেন, সাথে বল্লেন বাবাকে যেনো না বলা হয়! তিনি তার বাবাকে প্রচুন্ড ভয় পেতেন, তবে তার মা প্রথমে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি,কারণ তার বয়স বিবেচনা করে। প্রথমে বুঝতে পারিনি তার মধ্যে এতটা প্রতিভা হয়েছে। তবে তার মা তাকে আশ্বাস দিয়ে গেছে প্রতিনিয়ত, যেমন টাকা হাতে আসলে দিবে! এইভাবে প্রায় ২/৩ মাস পেরিয়ে গেলো, হটাত একদিন তার মা তাকে কিছু টাকা ব্যবস্থা করে দিলেন এবং বাসায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সাথে দিলেন এবং সেদিনই তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন , ঠিক মাঝ পথেই তার বাবা কল করলেন , তিনি অত্যন্ত বৃতগ্রস্ত হয়ে কল রিসিভ করলেন! তার বাবা জানতে চাইলেন “তুমি কোথায় বাবা?”
উত্তরে তিনি বললেন আমি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম, বাবা আমি ক্রিকেট খেলতে চাই!আমি একটি একাডেমিতে ভর্তি হতে চাই এবং সেই উদ্দেশ্যে আমি গ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। তাসকিন -রিয়াদের বাবারাও ক্রিকেটের প্রতি কিছুটা ভালোবাসা রয়েছে তার বাবা অনেক খুশি হয়ে তাকে অনুপ্রেরণা দিলেন এবং বলতে লাগলেন তুমি যাও আমি আছি তোমার সাথে, তোমার যাবতীয় প্রয়োজনে আমরা তোমার পাশে থাকব ইনশাআল্লাহ এবং সাথে সাথে তিনি সেইদিনেই তাসকিন-রিয়াদকে আরো ২০হাজার টাকা পাঠালেন ক্রিকেটে সরঞ্জাম এবং একাডেমিতে ভর্তি হওয়ার জন্য। তিনি মহা খুশি বাবা তাকে অনুপ্রেরণা দিল। এভাবেই শুরু হলো তার ক্রিকেটে যাত্রা। তার বাবা-মা সব সময় তাকে উৎসাহ দিয়েছেন এবং তার প্রতিভাকে সঠিকভাবে বিকাশ করতে সাহায্য করেছেন।

ওমান ক্রিকেটে স্থান পাওয়া:
সর্বপ্রথম তিনি ওমানে ব্যাংক-দোফার টিমের হয়ে সেকেন্ডিভিশন খেলার সুযোগ পায়, সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে ভালো খেলে ওমানের জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ হয় এই তরুণ পেসারের।

২০১৫সালে ওমান প্রিমিয়ার লীগ প্যাসেজ টু ইন্ডিয়াতে তার অভিষেক হয়,সে বছর তিনি মাস্কাট সিটির সাথে ভালো পারফর্ম করে সবার নজরে আসেন এই তরুণ পেসার। ওমান ক্রিকেটে প্রথম দিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়। ওমানের মতো একটি দেশে, যেখানে ক্রিকেটের প্রচলন ততটা ছিল না। তবে জাতীয় পর্যায়ের প্রচুর পাকিস্তানি এবং ইন্ডিয়ান ক্রিকেটার স্থায়ীভাবে সেখানে অংশগ্রহণ করেন। সেখানে তার সুযোগ পাওয়া ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাছাড়া, পেশাদার ক্রিকেটে প্রবেশের আগে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়েছে। ক্রিকেটের মৌলিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করতে এবং নিজের দক্ষতা উন্নত করতে তাকে অনেক সময় এবং পরিশ্রম দিতে হয়েছে।
তবে তাসকিনের অদম্য ইচ্ছাশক্তি এবং পরিশ্রমের ফলে তিনি এই সমস্ত চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে সক্ষম হন। তার কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার ফলে তিনি ধীরে ধীরে স্থানীয় টুর্নামেন্টগুলোতে নিজের অবস্থান তৈরি করে নেন।
এই যাত্রাপথে তাসকিনের সাফল্যের পেছনে তার পরিবার, কোচ এবং সহকর্মীদের অবদান ছিল অপরিসীম। তাদের সহযোগিতা ও সমর্থন তাসকিনকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন। এই সব চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাসকিন আহমেদ রিয়াদ তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শক্ত ভিত্তি গড়ে তুলেছেন। দলে স্থান পাওয়ার মাধ্যমে তার দক্ষতা ও প্রতিভার প্রমাণ দিয়েছেন।

 

ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার:
তাসকিন আহমেদ রিয়াদ, ওমান ক্রিকেটের উদীয়মান তারকা হিসেবে পরিচিত, তার ব্যক্তিগত জীবনেও একই রকম উদ্যমী। তার পরিবারে বাবা, মা এবং এক বোন এবং দুই জন ছোট ভাই রয়েছে। তাসকিনের ছোট ভাইও ক্রিকেটের প্রতি গভীর আগ্রহী, যা তাসকিনের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস।
তাসকিনের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মানুষদের মধ্যে তার কোচ এবং পরিবারের সদস্যরা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তার কোচ তাকে ক্রিকেটের প্রতি নিবেদিত হতে শিখিয়েছেন এবং পরিবার সবসময় তাকে সমর্থন করেছে। তাসকিনের মতে, পরিবারের সমর্থন ছাড়া এতদূর আসা সম্ভব হতো না।
ক্রিকেটের বাইরে তাসকিনের কিছু শখ এবং আগ্রহ রয়েছে। তিনি ভ্রমণ করতে পছন্দ করেন, নতুন স্থান এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার আগ্রহ তার মধ্যে প্রবল। তার জীবনের এই দিকগুলি তাকে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।
তাসকিনের ব্যক্তিগত জীবন এবং পরিবার, তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পাশাপাশি তাকে একজন সুস্থ, সুন্দর এবং ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তার জীবনের এই অংশগুলি তাকে শুধু একজন খেলোয়াড় নয়, একজন মানবিক এবং সংবেদনশীল ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করেছে।

বর্তমান ক্রিকেট ক্যারিয়ার:

তাসকিন আহমেদ রিয়াদের ক্রিকেট ক্যারিয়ার ইতিমধ্যে শেষের দিকে।২০১৭ তিনি ডান পায়ে গুরুতর লিগামেন্ট এলসিএল ইনজুরির কবলে পড়েন এই ক্রিকেটার অপারেশনের পরও বেশ কয়েকবার ইনজুরির কবলে পড়েন এই তরুণ ক্রিকেটার। অতঃপর তার সুন্দর একটি ক্যারিয়ারের সমাপ্তি ঘটে। প্রায় চার বছর তিনি ক্রিকেটের বাইরে রয়েছেন।

  • ক্রিকেট
  • খেলাধুলা