শরিয়তের দৃষ্টিতে নামাজসহ একাধিক ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য অজুর মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা আবশ্যক, যদি ব্যক্তির জন্য গোসল ফরজ না হয়। যেমন কোরআন স্পর্শ করা, তাওয়াফ করা, সাঈ করা ইত্যাদি। ইসলাম বিভিন্ন সময়ে অজু করার জন্য উৎসাহিত করেছে, যেমন ঘুমানোর আগে ও ঘুম থেকে ওঠার পর।
এ কারণে অজু মুমিনের একটি দৈনন্দিন কাজও বটে। অজুর কয়েকটি পুরস্কার।
মুমিনের দৈনন্দিন কাজ অজুর জন্য আল্লাহ মহাপুরস্কার ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জীবনের সব গুনাহ মাফ হওয়া এবং জান্নাত লাভ করা। তবে এই পুরস্কার লাভের জন্য শর্ত হলো সুন্নত তরিকায় যত্নের সঙ্গে অজু করা।
নিচে হাদিসে বর্ণিত অজুর কয়েকটি পুরস্কার তুলে ধরা হলো—
১. জান্নাতের দরজা খুলে যায় :
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার পর বলে, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই; তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি নবী (সা.) তাঁর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং আমাকে পবিত্রতা অর্জনকারীদের মধ্যে রাখুন। তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজের ইচ্ছামতো যেকোনো দরজা দিয়েই সেখানে প্রবেশ করতে পারবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৫৫)
২. গুনাহ থেকে মুক্তি :
হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অজু করে এবং তা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করে, তার শরীর থেকে, এমনকি নখের নিচ থেকেও গুনাহগুলো বের হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৫)
রাসুলে আকরাম (সা.) আরও বলেছেন, ‘মুসলিম বা মুমিন বান্দা যখন অজু করে, তখন যখন সে মুখমণ্ডল ধোয়ে, পানির সঙ্গে বা পানির শেষ কাতরার সঙ্গে তার চোখের মাধ্যমে করা গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। যখন সে দুই হাত ধোয়ে, তখন পানির সঙ্গে তার হাত দ্বারা করা গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। এবং যখন সে দুই পা ধোয়ে, তখন পানির সঙ্গে তার পা দিয়ে যাওয়া গুনাহগুলো বের হয়ে যায়। এভাবে সে গুনাহ থেকে পবিত্র হয়ে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৪৪)
৩. শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি :
যত্নের সঙ্গে অজু করলে ব্যক্তি শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তি পায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রাগ হচ্ছে শয়তানের প্রভাবের ফল। শয়তানকে আগুন থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আর আগুনকে পানি দিয়ে নেভানো যায়। তাই, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ রেগে যায়, সে যেন অজু করে নেয়।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৪).
৪. জীবন-জীবিকায় বরকত লাভ :
বিশুদ্ধভাবে ও সঠিক নিয়তে অজু করলে ব্যক্তির জীবন-জীবিকায় বরকত আসে। আনাস (রা.)-এর উদ্দেশ্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে বৎস! সঠিকভাবে অজু করো। এটি তোমার জীবনকে দীর্ঘায়িত করবে এবং তোমার দুই রক্ষী (ফেরেশতাকে) খুশি করবে।’ (তাবারানি : ৬/১২৩).
৫. হাউজে কাউছার লাভ :
নবীজি (সা.) সাহাবিদের সামনে হাউজে কাউছারের বর্ণনা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, মানুষ যেমন তার হাউস থেকে অন্য মানুষকে সরিয়ে দেয়, তেমনি আমিও সেদিন কিছু মানুষকে সরিয়ে দেব। সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, সেদিন কি আপনি আমাদের চিনতে পারবেন? নবীজি বললেন, বলো তো, যদি কারো হাতে ও পায়ে সাদা চিহ্নযুক্ত কিছু ঘোড়া থাকে এবং সেগুলোকে অসংখ্য কালো ঘোড়ার মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে কি সেই ব্যক্তি তার ঘোড়াগুলো চিনতে পারবে না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ, পারবে। হে আল্লাহর রাসুল! নবী করিম (সা.) বললেন, তেমনি তোমাদেরও এমন কিছু চিহ্ন থাকবে, যা অন্য কোনো উম্মতের হবে না। কিয়ামতের দিন তোমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো অজুর কারণে ঝলমল করতে থাকবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৪৬).
৬. জান্নাত ওয়াজিব হয়:
উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.) থেকে শুনেছি যে, যখন কোনো মুসলিম সুন্দরভাবে অজু করে, তারপর তার চেহারা ও মনকে আল্লাহর দিকে অভিমুখী করে দাঁড়িয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে, তখন তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৪)