প্রভাব বিস্তার করে এলাকায় হত্যা লুট ভাংচুর অগ্নিসংযোগ খাল দখল জমি দখল দুর্নীতি সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন সহ বেপরোয়া চাঁদা বাণিজ্য ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করার অভিযোগ উঠেছে হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মাহমুদুল হক জসিমের বিরুদ্ধে। তার এহেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত এলাকাবাসী। সম্প্রতি বকুল বেগম নামে এক নারী তার অত্যাচার অবিচার এবং নির্যাতনের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযুক্ত মাহমুদুল হক জসিম নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাজমারা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড পূর্ব বিরবিরি গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে। সে এক সময় বিএনপির সাথে সম্পৃক্ত থালেও ক্ষমতার লোভে ২০১৫ সালে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে আওয়ামীলীগে যোগদান করে এবং আওয়ামীলীগে ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য হয়।
অভিযোগের সুত্রে জানা যায়, ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের পর পরই সুবিধাভোগী মাহমুদল হক জসিম তার সন্ত্রাস বাহিনী নিয়া সেন্টার বাজার উঠে বিএনপি ও খালেদা জিয়ার স্লোগান দিয়ে বাজার দখল করে থাকে। সুবিধা ভোগ করার জন্য দল পরিবর্তন করে ওই রাতে মানুষের ঘর বাড়ী অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে। স্থানীয় মনির নামে এক ব্যক্তির ৮টি ও রবিয়লের ২টি গরু সহ ঘরের মালামাল, স্বর্নালংকার নিয়ে ঘর বাড়ী ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করে। এই গরু গুলির মধ্যে ২টি গরু মুগবুল হাজীর বাজার নিয়া জবাই করে সন্ত্রাসীরা ভাগ বন্টন করে নিয়া যায়। আর বাকী গুলি বিক্রয় করে। উক্ত বিষয় নিয়া মনির স্ত্রী ও রবিয়ল নৌবাহিনীর অফিসে অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার পায়নি। একই রাত্রে সেন্টার সভাপতি মিল্লাদ এর দোকান ঘর লুটপাট করে সব প্রায় ৮ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়।
গত ৬ই আগষ্ট হইতে ৩০ শে আগষ্ট পর্যন্ত আবুল সেরাং এর ২টি অটোরিক্সা, তাদের দোকান ঘর দখল করে বিএনপির অফিস করা হয়। বাদশা নামে এক লোক থেকে ১০ হাজার, ইসমাইল সেরাং থেকে ৬০ হাজার হেলাল মেম্বার থেকে ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় সহ আলা উদ্দিন মেম্বারের দোকান ঘর লুট করে নিয়া যায়।
তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়া গত ৩ই সেপ্টেম্বর রাত্রে কাদিরার ঘাট এ বাকের মেস্ত্ররী ও সোহেলের বাড়ী দোকান ঘর লুট ও অগ্নিসংযোগ করে সব ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ৫ই সেপ্টেম্বর রাত্রে আলাদিগ্রামে ইয়াছিনের বাড়ী লুটপাট এবং তার ৫টি গরু নিয়া যায়। এইভাবে প্রতিনিয়ত সাধারন মানুষের বাড়ী ঘর ভাংচুর লুটপাট চাঁদা আদায় সহ তাদের শারীরিক নির্যাতন করা হয়। অত্র এলাকার বিএনপি নেতা আনোয়ার, আলা উদ্দিন তার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তাদের ভাই বাবুলকে পিটিয়া মাথা পাটিয়ে আহত করে। তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেনা।
মুলত ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে যুবদলের সদস্য হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে এই জসিমের উত্থান ঘটে। তখন থেকে সে কিছু সংখ্যক যুবক নিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে দলের প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করিতে থাকে। ২০০৩ ইং সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পেশি শক্তি ব্যবহার করে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর সন্ত্রাস বাহিনী দিয়া আবদুর রহমান নামে এক ব্যক্তির বাড়ীতে আক্রমন করে ভাংচুর অগ্নিসংযোগ করে বাড়ীর সকল মহিলাদের উপর অত্যাচার করে একপর্যায়ে তার পুত্র বধুর পেটে লাথি মেরে গর্ভজাত সন্তান কে হত্যা করে। এই ঘটনায় হাতিয়া থানায় একটি হত্যা ও লুটপাটের মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নং ২৫/২০০৩ ইং।
এইভাবে মেম্বার হওয়ার পর এলাকাতে সাধারন মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন সহ সকল খারাপ কার্যক্রম করিতে থাকে। ২০০৪ ইং সালে একটি মহিষকে কেন্দ্র করে মাহবুবুর রহমান এর সাথে কথা কাটাকাটি করে তাকে মারধর করে পিটিয়ে জখম করে তাতে একটি মামলা হয়। উক্ত মামলাটি সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফজলুল আজিম সাহেব মামলাটি নিষ্পত্তি করে দেয়।
২০০৬ ইং সালে তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়া তাজুল ইসলামকে বাড়ী থেকে ধরে এনে প্রকাশ্যে সেন্টার বাজারে মাহমুদল হক জসিমের অফিস কক্ষে পিটিয়ে এবং শ্বাসরোধ করে প্রানে হত্যা করে। উক্ত হত্যার একটি মামলা হয়। মামলা নং-৯৩/২০০৬ ইং মামলাটি চলমান আছে। ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সে আর না জিততে পেরে ক্ষমতার লোভে ২০১৫ সালে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে আওয়ামীলীগে যোগদান করে এবং আওয়ামীলীগে ৬নং ওয়ার্ডের সদস্য হয়।
২০১৬ ইং সালে পুনরায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাহমুদল হক জসিম নির্বাচন করে পেশি শক্তি ও মোহাম্মদ আলী সুবাদে নির্বাচিত হয়। সেদিন রাত্রে অপরাজিত প্রার্থীর সমর্থক মিরাজ উদ্দিন ভান্ডারীকে তার গুন্ডা বাহিনী নিয়া আক্রমন করে এবং ব্যাপক মারধর করে। এই ঘটনার জন্য একটি মামলা হয়। বর্তমানে মামলা টি চলমান আছে।
২০১৭ ইং সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অপরাজিত প্রার্থীর সমর্থক মনির উদ্দিন কে রাতের অন্ধকারে তার সন্ত্রাস বাহিনী নিয়া মধ্যম বাজারে দক্ষিনে রাস্তার উপরে আক্রমন করে বেদম মারধর করে রাস্তার উপর ফেলে যায়। পরবর্তী লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়া যায়। সেখানে অনেক দিন চিকিৎসার পর কোন রকম সুস্থ হয়। এখনও স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারেনা। এই ঘটনার জন্য হাতিয়া থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটি চলমান আছে।
২০২১ ইং সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মাহমুদুল হক জসিম নির্বাচনে ডাঃ মিরাজ উদ্দিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পরাজিত হয়। মাহমুদল হক জসিম পরাজিত হয়ে চেয়ারম্যান এডঃ মাছুম বিল্লাহ, আওয়ামীলীগ জাহাজমারা ইউনিয়ন সভাপতি মহি উদ্দিন মেম্বার ও সাহাব উদ্দিনের সুবাদে সকল দুর্নীতি, খাল, জমি দখল মানুষের উপর অত্যাচার নির্যাতন ইত্যাদি কার্যক্রম করিয়া থাকেন। ২০২৩ সালে সাধারন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্বের লোভ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার বাহিনী নিয়া বর্তমান মেম্বার ডাঃ মিরাজের সেন্টার বাজার দক্ষিন গলিতে মানুষের সামনে রড় অস্ত্র দিয়া এমনভাবে মারধর করে এবং মাথা ফাটিয়ে দেয়। লোকজন তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা রেপার করেন। এই ঘটনায় ও একটি মামলা হয়। মামলা নং-৯৮/২০২৩ ইং, মামলাটি চলমান রয়েছে ।
এলাকাবাসী জানায়, গত ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর মাহমুদল হক জসিম সুবিধা ভোগ করার জন্য দল পরিবর্তন করে ওই রাতে মানুষের ঘর বাড়ী অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে নতুন করে চাঁদা বাণিজ্য শুরু করে। সম্প্রতি জাহাজমারা ইউনিয়নে দুটি হত্যার ঘটনায় মামলায় নাম দেওয়ার ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, হাতিয়ার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর শাসন আমলে চাষাবাদ কৃত নিমতলীর জমি গুলো নতুন করে দাগ প্রতি ৮ হাজার টাকা করে নিয়ে চাঁদা নির্ধারণ করে কিছু লোকের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। এবং আরো অনেকে অভিযোগ করেন, মাহমুদুল হক জসীম ও তার ভাগিনা অবসর প্রাপ্ত সার্জেন্ট আফসার উদ্দিন এই চাঁদা নির্ধারণ করে হাতিয়া সেন্টার বাজার বিএনপি অফিসে।
এরা দুই মামু ভাগিনা আফসার ও জসীম তারা পুরো সেন্টার বাজারে যত অপকর্ম হচ্ছে সবই করে বেড়ায়।
এবং বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে মাহমুদুল হক জসিমের এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পুরো এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং প্রশাসনের নিকট আমাদের আবেদন তাকে যেন দ্রুত গ্রেফতার করে শাস্তি প্রদান করা হয়।
এই বিষয়ে আফসার উদ্দিন জানান, আমার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ হচ্ছে বা দিচ্ছে সবই মিথ্যা ও বানোয়াট, এবং আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে
অভিযুক্ত মাহমুদুল হক জসিমের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, এবং বিরুদ্ধে এমন কোন অভিযোগ নেই।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিল্টন চাকমা বলেন, আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি, তবে আমরা অভিযোগ পেলে যথাযথ তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিব।