ইসলামে অঙ্গীকার পূরণের গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। এটি বিশ্বাস এবং নৈতিকতার একটি মূল ভিত্তি। মুসলমানদের জন্য অঙ্গীকার রাখা একটি ধর্মীয় দায়িত্ব, যা আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য এবং সততার প্রতীক। অঙ্গীকার ভঙ্গ করা শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্ককেই ক্ষতিগ্রস্ত করে না, বরং এটি সমাজের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ইসলামে অঙ্গীকার পূরণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রত্যেক মুমিনের জন্য অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পূরণে যত্নবান হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কারণ পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অঙ্গীকার পূরণের প্রতি বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো। তোমাদের জন্য গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু হালাল করা হয়েছে, তোমাদের কাছে যা বর্ণনা করা হচ্ছে তা ছাড়া।
তবে ইহরাম অবস্থায় শিকার করা হালাল নয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ যা ইচ্ছা বিধান দেন।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ১)
অঙ্গীকারের প্রতি যত্নবান হওয়া বিবেকবান মানুষের কাজ। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ অঙ্গীকারের ব্যাপারে যত্নশীল মুমিনদের প্রশংসা করেছেন।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনার রব থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে, সে কি তার মতো যে অন্ধ? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেকসম্পন্নরাই। যারা আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ১৯-২০)
মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কিরামকে অঙ্গীকার পূরণের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। অঙ্গীকার ও আমানত রক্ষার প্রতি উম্মতকে উৎসাহিত করা নবীদের একটি বিশেষ গুণ ছিল।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আবু সুফিয়ান (রা.) আমাকে জানিয়েছেন যে হিরাক্লিয়াস তাকে বলেছিলেন, আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তিনি [নবী (সা.)] তোমাদের কী কী আদেশ দেন? তুমি বললে যে তিনি তোমাদের নামাজ, সত্যবাদিতা, পবিত্রতা, ওয়াদা পূরণ এবং আমানত আদায়ের আদেশ দেন। হিরাক্লিয়াস বলেন, এটাই নবীগণের সিফাত। (বুখারি : ২৬৮১)
কিয়ামতের দিন বান্দাদের তাদের অঙ্গীকার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। যারা অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি রক্ষায় উদাসীন থাকবে, কিয়ামতের দিন তাদের কঠিন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে। তারা অপমানিত হবে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা এতিমের সম্পদের কাছে যেয়ো না সুন্দরতম পন্থা ছাড়া, যতক্ষণ না সে বয়সের পূর্ণতায় উপনীত হয়। আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো, নিশ্চয়ই অঙ্গীকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৪)
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা কিয়ামত দিবসে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সবাইকে একত্র করবেন, তখন প্রত্যেক প্রতারকের জন্য পৃথক পতাকা উড্ডীন করা হবে এবং বলা হবে যে এটি অমুকের পুত্র অমুকের প্রতারণার চিহ্ন। (মুসলিম, হাদিস : ৪৪২১)
মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে অঙ্গীকার রক্ষায় যত্নবান হওয়ার তাওফিক দান করুন।