ইসলাম বলে শিশুদের প্রতি সদয় হতে

ইসলাম বলে শিশুদের প্রতি সদয় হতে

ইসলাম শিশুদের প্রতি সদয় হতে উৎসাহিত করে। আমাদের সবার উচিত শিশুদের প্রতি বন্ধুসুলভ আচরণ করা, কারণ আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশুদের প্রতি স্নেহ, সদয় আচরণ এবং মমত্বপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শিশুদের প্রতি গভীর স্নেহ প্রদর্শন করতেন। তিনি তাদের প্রতি অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। যখন শিশুদের অধিকার লঙ্ঘিত হতো বা কেউ তাদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করতো, তখন তিনি খুব দুঃখিত হতেন। ইসলামের প্রাথমিক সময়ে, যখন মহিলারা মসজিদে এসে জামাতে অংশগ্রহণ করতেন, তখন শিশুদের কান্না শুনলে নবীজি নামাজ সংক্ষিপ্ত করে ফেলতেন।

হজরত হাসান ও হুসাইন (রা.) যখন নামাজ পড়তেন, তখন নবীজির কাঁধে চড়ে বসতেন। তারা যতক্ষণ ইচ্ছা করতেন, নবীজি সিজদা থেকে মাথা তুলতেন না। একবার এক সাহাবি তাদের এই আচরণে নবীজির নামাজে বিঘ্ন ঘটছে মনে করে একটু ধমক দেন, কিন্তু নবীজি এতে খুবই অসন্তুষ্ট হন। তিনি সব শিশুকে খুব আদর করতেন।

হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার একজন বেদুইন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে শিশুদের স্নেহভরে চুমু খেতে দেখে বললেন, আপনারা কি সত্যিই শিশুদের স্নেহভরে চুমু খান? আমরা তো শিশুদের প্রতি এমন স্নেহ দেখাই না। নবীজি উত্তর দিলেন, আল্লাহ তোমার হৃদয় থেকে দয়া ও মায়া তুলে নিয়েছেন। এতে আমার কী করার আছে। অর্থাৎ, তোমাদের হৃদয়ে শিশুদের প্রতি মায়া নেই বলেই তুমি তাদের স্নেহভরে চুমু খেতে পার না।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কন্যাশিশুদের প্রতি বিশেষ যত্নবান হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ছেলে সন্তানের তুলনায় মেয়ে সন্তানের জন্য ভালো খাবার এবং পোশাক-পরিচ্ছদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা অবহেলার শিকার না হয়।

রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি কেউ কন্যাসন্তানের প্রতিপালনে কষ্ট পায় এবং ধৈর্য ধরে তাদের প্রতি সুন্দর আচরণ ও যত্নসহকারে লালনপালন করে এবং তাদের শিষ্টাচার গড়ে তোলে, তাহলে কিয়ামতের দিন ওই কন্যাসন্তানরা তার জন্য জাহান্নামের মাঝে আড়াল হয়ে দাঁড়াবে।’ বুখারি, মুসলিম।

ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরবে অনেকেই কন্যাশিশুর জন্মকে অপমানজনক মনে করত। সেই সময় জীবিত কবর দেওয়ার নির্মম ঘটনা ঘটত আইয়ামে জাহেলিয়ায়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বিষয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেন। কোরআনে শিশু হত্যার বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি তিনজন মেয়ে অথবা তিনজন বোনকে সুন্দরভাবে আদব শিক্ষা দিয়ে তাদের প্রতি সদয় হয়ে প্রতিপালন করবে, বিয়ের মাধ্যমে তারা স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে দেবেন। এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, যদি দুজনকে প্রতিপালন করা হয়? নবীজি বললেন, দুজনকে করলেও। এমনকি একজনের কথাও বললে নবীজি একই কথা বলতেন।’