আমরা প্রতিনিয়ত গুনাহ করছি। জেনে-বুঝে যেমন করছি, তেমনি মনের অজান্তে ও অজ্ঞাতসারেও গুনাহ হচ্ছে। আল্লাহ সবকিছু দেখছেন এবং আমাদের সব বিষয়ে অবগত আছেন।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে বা নিজেদের প্রতি জুলুম করে, তারা তৎক্ষণাৎ আল্লাহকে স্মরণ করে এবং আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আসলে আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে তাদের গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (সুরা ইমরান, আয়াত ১৩৫)।
রসুল (সা.) বলেছেন, যখন একজন ব্যক্তি গুনাহ করার পর আল্লাহর কাছে এসে বলে, হে আল্লাহ, আমি গুনাহ করেছি, তাই আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবেন এবং তাকে পাকড়াও করবে; আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপর সে আবারও গুনাহ করে এবং পুনরায় বলে, হে রব, আমি আবার গুনাহ করেছি, তাই আমাকে ক্ষমা করুন। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবেন এবং তাকে পাকড়াও করবে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম। এরপরও সে আরেকটি গুনাহ করে এবং বলে, হে রব, আমি গুনাহ করেছি। আমাকে ক্ষমা করুন। তখন আল্লাহতায়ালা বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি তার গুনাহ মাফ করবেন এবং তাকে পাকড়াও করবে। আমি আমার বান্দাকে ক্ষমা করে দিলাম, সে যাই করুক না কেন। (বুখারি ৭৫০৭, মুসলিম ২৭৫৮) সুবহানাল্লাহ।
রসুল (সা.) আরও বলেছেন, যদি কেউ গুনাহ করে পরে পাক পবিত্র হয় এবং সালাত আদায় করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন। (তিরমিজি ৪০৬, ইবনে মাজাহ, ১৩৯৫)।
কোরআনে আল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি গুনাহের কাজ করে অথবা গুনাহ করে নিজের ওপর জুলুম করে সে আল্লাহতায়ালার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, সে তখন আল্লাহতায়ালাকে পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু হিসেবে পাবে। (সুরা নিসা, আয়াত ১১০)।
তোমাদের যা নিষেধ করা হয়েছে তার মধ্যে যা কবিরা গুনাহ তা থেকে বিরত থাকলে আমি তোমাদের ছোট ছোট গুনাহগুলো মাফ করে দেব এবং তোমাদের সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাব। (সুরা নিসা, আয়াত ৩১)
এ আয়াতটি থেকে বোঝা যায় গুনাহ দুই প্রকার। একটি হলো কবিরা গুনাহ বা বড় পাপ, আর অন্যটি হলো সগিরা গুনাহ, যা হালকা ও ছোট পাপ। ফরজ কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করা কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য অপরিহার্য। ফরজ ও ওয়াজিব ত্যাগ করা কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি ফরজ ও ওয়াজিবগুলো সঠিকভাবে পালন করে, সে কবিরা গুনাহ থেকে বাঁচতে পারে এবং আল্লাহ তার সগিরা গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেন।
রসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং বড় গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। সাহাবিগণ যখন বড় গুনাহ সম্পর্কে জানতে চাইলেন, তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক না করা, কোনো মুসলিমকে হত্যা না করা এবং যুদ্ধের ময়দান থেকে পালিয়ে না যাওয়া। (মুসনাদে আহমদ, ৫/৪১৩)। আল্লাহ বলেন, আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকাজ করে, তারপর সৎ পথে অবিচল থাকে। (সুরা ত্বা হা, আয়াত ৮২)।